ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আরও নিবিড় সহযোগিতার পথে অগ্রসর হচ্ছে ইউরোপের নর্ডিক অঞ্চলের পাঁচটি দেশ। জার্মানিও নর্ডিক দেশগুলির সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা ইউরোপের অনেক দেশকে নতুন করে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য করছে। উত্তরের নর্ডিক দেশগুলিও সেই প্রবণতায় ব্যতিক্রম নয়।ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দেবার পথে এগিয়ে চলেছে৷ এবার নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল।
গতকাল সোমবার নরওয়ের রাজধানী অসলোয় পাঁচটি নর্ডিক দেশের শীর্ষ নেতারা বাড়তি সহযোগিতার রূপরেখা তুলে ধরেন। সেই লক্ষ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ে আরও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে দেশগুলি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জ্বালানির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াতে চায় নর্ডিক দেশগুলি।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইয়োনাস গার স্ট্যোরে বলেন, নর্ডিক দেশগুলির সহযোগিতা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও নর্ডিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেন।
উল্লেখ্য, জার্মান সরকার গত কয়েক মাস ধরে নর্ডিক দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে বিশেষ করে নরওয়ে থেকে আরও গ্যাস কিনছে জার্মানি। জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নরওয়েই জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে।
শলৎস সে দেশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, জার্মানি তথা ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে নরওয়ে অত্যন্ত নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও নির্ভরযোগ্য সহযোগী। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও দুই দেশ নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় বলে জার্মান চ্যান্সেলর উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো এবং এখন নর্ডিক দেশগুলি আরও সংঘবদ্ধ হলেও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থেকে যাচ্ছে। ইইউ দেশগুলিতে রাশিয়ার বিমানের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত সে দেশ থেকে বেশি মানুষ ইউরোপে আসতে পারছেন না। কিন্তু দীর্ঘ স্থলসীমান্তের কারণে ফিনল্যান্ডে রুশ পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ফিনল্যান্ড তাই রুশ নাগরিকদের শেঙেন ভিসা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছে।
সে দেশের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন বলেন, রুশ নাগরিকরা এই যুদ্ধ শুরু না করলেও যুদ্ধের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন। ফলে এস্টোনিয়ার মতো ফিনল্যান্ডও রুশ নাগরিকদের ইউরোপে প্রবেশ বন্ধ করতে চায়।
মারিনের মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধের মাঝে রুশ পর্যটকদের ইউরোপে প্রমোদ ভবন একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস অবশ্য রুশ নাগরিকদের উপর এমন ঢালাও নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে বলেন, রাশিয়ার অনেক মানুষ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসনের আওতা থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাদের জন্য ইউরোপের দরজা বন্ধ করা উচিত হবে না। শলৎসের মতে, এটা রুশ জনগণের যুদ্ধ নয়, শুধু পুতিনের যুদ্ধ।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।