অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের উৎসব। এই উৎসব শুরু হবে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। প্রতি বছরের মতো এবারও লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা হবে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে এই উৎসব আলো ছড়াবে পাঠকের হৃদয়ে। প্রতি বছর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হয় অমর একুশে বইমেলা। এবারও অনুষ্ঠিত হবে একই স্থানে। যে কারণে অক্টোবর থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন লেখক-প্রচ্ছদশিল্পী-প্রকাশকরা।
এবার হঠাৎ করে খবর আসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না বইমেলা। বরাদ্দ পায়নি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। এমন খবর প্রচার হয়েছিল গত বইমেলায়ও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তখনই। উদ্যান ঘিরে সরকারের সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
গত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা শেষ হওয়ার পরই কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তখন ভবিষ্যতে আর বইমেলা এখানে হবে না বলে শোনা গিয়েছিল। সব জেনেশুনেই একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল—তাহলে কোথায় হবে? নতুন স্থানে কি বইমেলা জমে উঠবে? আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও এ নিয়ে কথা বলেছে তখন। একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছিলেন, ‘বইমেলা সরবে না। বাংলা একাডেমির সঙ্গে সংযোগ রেখেই মেলা হবে।’
তার এমন কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলেন সবাই। সঙ্গে সঙ্গে দাবিও তুলছিলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তুললেও তার মধ্যে বইমেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। বইমেলা তো আর সংস্কৃতির বাইরের কিছু নয়। বিশাল এ উদ্যানের একটি অংশকে বইমেলার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক।
তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি যে খবরটি চাউর হয়েছে, তা হলো—অমর একুশে বইমেলা ২০২৫–এর জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাচ্ছে না বাংলা একাডেমি। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, বিগত ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ আয়োজন করতে হবে। ৬ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-৩ থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়। সে ক্ষেত্রে আগামী বইমেলার আয়োজন কোথায় হবে, তা কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
এ বিষয়ে জবাব দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলা করা যাবে না, এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, একাডেমির চত্বরের ভেতরে মেলার আয়োজন করার কথা। তবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা করতে চাই।’
আশার কথা হচ্ছে—একই দিনে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বলে জানিয়েছেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি, আমাদের সচিব আলোচনা করেছেন। বইমেলা আগের স্থানেই হবে।’ ফলে সব ধরনের আশঙ্কা আপাতত দূর হয়েছে। বইমেলা পূর্বনির্ধারিত স্থানেই হচ্ছে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন লেখক-প্রকাশক-পাঠকরা।
তাই তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা হওয়ার খবরে খুশি হন লেখক-প্রকাশকরা। পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রচ্ছদশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লেখকরা ব্যস্ত লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজে। সরব হয়ে উঠেছে ছাপাখানা। দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না প্রকাশকরা। যেন সাজ সাজ রব উঠে গেছে। শিগগির শুরু হব স্টল বরাদ্দের আবেদন। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠবে বাংলা একাডেমি। চিরচেনা রূপে ফিরবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ফলে আমরা আশা করি এই বৃহৎ উৎসব এবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। লেখক-পাঠকে পারস্পরিক ভাব বিনিময় হবে। প্রাণের এই উৎসব মানুষের মাঝে বইপড়ার আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে। সব রকমের আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিয়ে সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এই বইমেলা অতীত গৌরব অক্ষুণ্ন রেখেই ইতি টানবে। সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে আয়োজকরা সার্বজনীন মেলা উপহার দিতে পারবে।
প্রকাশক-লেখক-পাঠকে মুখর হয়ে উঠবে বইমেলা প্রাঙ্গণ। পাঠকের উপস্থিতিতে লেখক-প্রকাশক-আয়োজকদের মুখে হাসি ফুটবে। তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলতে তুলতে তারা মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করুবেন। পরবর্তী বছরগুলোতেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সার্থক বইমেলার জন্য অপেক্ষা নিয়ে কাটবে আগামী দিনগুলো। আর কোনো আশঙ্কা যেন হাতছানি না দেয়, তার জন্য স্থায়ী বন্দোবস্ত এখন সময়ের দাবি।