আমাদের দোতলা ভবন আর স্কুলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ বটগাছটা। দিনে স্কুলের বাচ্চা-কাচ্চারা গাছের নিচে খেলা করলেও রাতে এর ধারেকাছেও কেউ আসে না। কেউ কেউ নাকি বহু বছর আগে আত্মহত্যা করা এক নারীর কান্নার আওয়াজ শোনে। আবার নৃত্যরত আগুনের দলাও দেখে কেউ কেউ। আমার চোখে কোনোদিন কিছু পড়েনি, কখনো কিছু শুনিওনি।
আমি শুনি নানান পাখির চিৎকার; তাদের হাসি, কান্না; শুনি তাদের অট্টহাসি! ঢাকার অলিগলি, স্ট্রিট-লেনের মতো গাছটার সহস্র ডালপালা। কোনটার সঙ্গে কোনটা গিয়ে প্যাঁচ খেয়েছে— বোঝা মুশকিল। সেখানেই ঠিক বস্তির মতো অসংখ্য পাখির বাসা। আবার মগডালে মনে হয় যেন খয়েরি কিংবা ধূসর রঙের পলিথিনের বহু ঠোঙা ঝুলে আছে; আসলে সেগুলো বাদুড়।
আমাদের ছাদের ওপরের দক্ষিণ দিকটায় উন্মুক্ত ছাতার মতো কয়েকটা ডাল ছায়া দিয়ে যায়। আমি আর আমার ছোট্ট মেয়ে প্রায়ই হাওয়া খাই এখানে এসে। আমার ছোট্ট মেয়ের নানাবিধ প্রশ্ন—‘বাবা, এটা কী? বাবা, ওটা কী?’
অনেক সময় জবাব দিতে দিতে যদি ক্লান্ত হয়ে যাই। উলটো দম ধরে ওকেই সওয়াল করি—‘তুমিই বলো, কী নাম ওটার?’
সে সাবলীলভাবে জবাব দেয়—‘কাক!’
‘ওটা?’
‘বুলবুলি।’
‘আর ঐ যে ওটা?’
‘সারস!’
‘না, মা। ওটা সারস নয়। ওটা বক।’ আমি বলি।
আসলে সারস আর বকের খুব বেশি তফাত না থাকায় মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলে সে। ছোট মানুষ, আমার কথায় মন ভরে না তার। আরো ব্যাখ্যা চায়। শেষমেশ যখন বলি সারস তো পরিযায়ী পাখি, এই ভরা গ্রীষ্মে ওরা আর এখানে থাকে না। ঠান্ডা কোনো অঞ্চলে চলে গেছে। গ্রীষ্ম গেলে ফের চলে আসবে। মেয়ে আমার নীরবে শোনে। হঠাত্ মেয়ে নাক সিঁটকে বলে, ‘বাবা, গন্ধ!’
‘কীসের গন্ধ?’
‘পাচ্ছ না তুমি? উহ! থু!’
আমি টের পাই। একটা চিল অদূরেই বসে তার ব্লেডের মতো ধারালো ঠোঁটে একটা মরা ইঁদুর ছিঁড়ে খাচ্ছে। ধীরে ধীরে দু-একটা কাক জুটে যায়। ভাগ বসাতে চায়, কিন্তু চিল উড়ে যায়। অন্য একটা ডালে। তারপর আকাশে হারায়।
মেয়ের মনোযোগ ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্যে বলি, ‘মা, বলো দেখি, চিল ওড়ে কেমন করে?’
সে দু হাত তুলে দেখায়। কিন্তু দুর্গন্ধের কথা ভোলে না। আমি সান্তনা দিই, বাতাস উঠলে কিংবা বৃষ্টি এলে এই গন্ধ আর থাকবে না, মা। সান্ত¾না দিতে দিতে সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসি নিচে।
সূর্যটাও নামে, নামে বিকেলের পিছে গোধূলি। তার পিছনে নামে রাত। আঁধার রাত। আম-কাঁঠাল পাকা প্রচণ্ড গরম যেন খামছে ধরে আছে পৃথিবীটাকে।
হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার। তড়িঘড়ি উঠে খোলা জানালা বন্ধ করি। মনের গহিনেও ঝড় বয়ে যায়। প্যাঁচাটা ভিজছে। বাদুড়েরা ভিজছে। ভিজছে কাক, দোয়েল, শালিক সবাই। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের সুরে চাপা পড়ে পাখিদের কান্নার শব্দ। আর চাপা পড়ে ঘুমে আমার বিলাসী অনুভূতিরা।
ঝড়ের কারণে শীতল হওয়াবশত একটু বেশিই ঘুমাই। তাছাড়া আজ শুক্রবারও, বন্ধের দিন। আমার মেয়ে এসে ‘বাবা, ওঠো; বাবা, ওঠো’—সরবে ডাকে। জেগে দেখি বেলা ন’টা বাজে। কোনো বৃষ্টি নেই, কোনো ঝড় নেই। জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে তেজস্বী সূর্যের আলোয় আলোকিত আমাদের মুখ।
হঠাৎ একটা কাকের গোঙানির শব্দে আমার চোখে চোখ রাখে মেয়ে।
‘কোথায়?’
‘মনে হচ্ছে, ছাদে।’ আমি বলি।
জলদি ছাদে উঠি আমরা। খুঁজে ফিরি কাকটাকে। ছাদে নয়, স্কুল মাঠের এক প্রান্েত। রাতভর বৃষ্টিভেজা কাকটাকে ধরেছে কুকুর। কামড়াচ্ছে, হাতাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। একদম জেরবার কাক। মাঠে একটা কুকুর খেলে। আর দুই-তিনটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে, হাসে, লেজ নাড়ে।
সূর্যের আলোয় ঝলমলে এই দিনে সবকিছু দেখা যায়। শুধু দেখা যায় না অন্য কোনো কাককে। শালিক, ফিঙে কিংবা অন্য কোনো পাখিও চিৎকার-চেঁচামেচি করে না। কেমন গুমোট এক অন্ধকার আবহে ডুবে আছে সবাই, সবকিছু। স্কুলের বারান্দায় উঠতি বয়সের কিছু কিশোর দেখতে পাই।
তাদের সব ক’টা মাথা একসঙ্গে বৃত্তাকারে অবনত। খুব সম্ভব মোবাইল গেমসে ডুবছে। পাবজি অথবা ফ্রি ফায়ার। আমি হাঁক ছাড়ি—‘এয় জাফর, এয় জয়, এয়...!’
বার তিনেক ডাকার পরে মাথা তোলে জাফর। আমি ইশারা করে তাদেরকে কাকটাকে বাঁচাতে বলি। জাফর হিশহিশ শব্দ করে তাড়াতে চেষ্টা করে কুকুরদের। জয় মোবাইলে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ততক্ষণে পরাজিত হয় কাকটা!
২৮
বিশেষ প্রতিবেদন
হাত বদলে নিবন্ধিত সিম যাচ্ছে অপরাধ জগতে!
আবদুল হামিদ
অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত ফোনের সিমকার্ড নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে সরকার। সম্প্রতিক সময়ে সিম কোম্পানি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু কর্মচারীর সহযোগিতায় হরহামেশা ভুয়া নামে সিম নিবন্ধন হচ্ছে বলে অভিযোগ ও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পরে সেটি হাত বদল হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকদের হাতে।
জানা গেছে, এই সিম দিয়ে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপকর্ম করে যায়। ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরও অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনার তদন্তে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা এমনই।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কোনো অপরাধ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধী শনাক্তের জন্য ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে এগিয়ে যায় তদন্ত কাজ। কিন্তু এখন তদন্তে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অপরাধীর ব্যবহৃত মুঠোফোনের সিম অন্যের নামে নিবন্ধিত। তাতে তদন্ত মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। এতে করে সময় নষ্টের সঙ্গে সঙ্গে পণ্ডশ্রম হয়। সেজন্য এখন তদন্তের আগে এটা নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।
রাজধানীর শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার আগে বেশ কয়েক দিন ফোনে হুমকি দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলিকে ফোন করে হুমকি দেয় কে বা কারা। এসব নম্বরেরও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব থেকে আবার নিবন্ধিত সিমের বিষয়টি সামনে আসে গোয়েন্দা সংস্থার।
গোয়েন্দারা বলছেন, ভুয়া নিবন্ধিত সিমের পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা হলো ভুয়া ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বরের মুঠোফোন। প্রতিটি মোবাইল ফোনসেটের জন্য একটি ১৫ অঙ্কের আইএমইআই নম্বর থাকে। এই নম্বরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মুঠোফোনটিকে শনাক্ত এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে এ প্রযুক্তি খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তারা।
তবে বিষয়টি জানার পর থেকে অপরাধীরাও প্রযুক্তির সুবিধা নিতে শুরু করেছে। তারা অপরাধ সংঘটন ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ভুয়া আইএমইআই মুঠোফোন ব্যবহার করছে। ফলে অপরাধী শনাক্ত করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন মামলার তদন্তকাজ ও অপরাধী শনাক্তে এখন বড় বাধা হয়ে উঠেছে কিছু সিম কোম্পানির এজেন্টরা। সাধারণ মানুষ সিমকার্ড কিনতে গেলে তারা নিবন্ধনের সময় কৌশলে ওই ব্যক্তির এনআইডি নম্বর ও আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দিয়ে বাড়তি সিম নিবন্ধন করে রাখে। পরে সেটা আরেক এজেন্টের মাধ্যমে অপরাধীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও পরে নতুন কৌশলে এসব সিমকার্ড বাজারে আসছে বলে জানান গোয়েন্দা সূত্র।
র্যারের এক কর্মকর্তা বলেন, গত তিন মাসে তাদের একটি টিম ২ হাজার ৭৫টি অবৈধ সিম জব্দ করেছে। এই সিমগুলো সাত শতাধিক ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা। এই অভিযানে বিভিন্ন সিম কোম্পানির ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিম কোম্পানির লোকও রয়েছেন। এ ছাড়া ডিবির জালেও ধরা পড়েছে সিম জালিয়াতি চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য।
একজন ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড দিয়ে বিভিন্ন ফোন অপারেটর থেকে ১৫টি সিম নিতে পারেন। এই সুযোগটিই নেয় কোনো কোনো এজেন্ট। তারা কোনো গ্রাহক সিম কিনতে গেলে তার সিমের সঙ্গে আরও দুই-তিনটি নিবন্ধন করে নিজেরা সংরক্ষণ করে রাখে। পরে সেগুলো নির্দিষ্ট লোকদের কাছে বিক্রি করে দেন।
সিমকার্ড অবৈধভাবে নিবন্ধনের পেছনে কয়েকটি সিম কোম্পনির উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা জড়িত আছেন বলে জানান র্যাব-৩ কোম্পানি কমান্ডার।
অন্য সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, অপরাধীরা একসঙ্গে অনেকগুলো সিম কিনে তা বিভিন্ন অপরাধের কাজে ব্যবহার করে এবং কাজ শেষে ফেলে দেয়। সিম কোম্পনির এজেন্টদের যোগসাজশে এসব অনিবন্ধিত সিম অপরাধীদের হাতে যায়।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্লাহ জানান, কয়েকজন ব্যবসায়ী কমলাপুর ইকবাল ট্রেডার্সের দোকানে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিমকার্ড অবৈধভাবে নিবন্ধন করে বেশি দামে বিক্রি করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন জনের নামে নিবন্ধিত বেশ কিছু সিম উদ্ধার করা হয়।
সম্প্রতিক সময়ে এই অবৈধভাবে নিবন্ধিত সিমের অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছে বলে জানান র্যাবের আরেক কর্মকর্তা। এসব সিম দেশের নানা জায়গার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত। গত ২৪ জুলাই এ ধরনের সিমের একটি চালানসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা দুই শতাধিক সিমকার্ডের বেশির ভাগ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা।
গ্রেপ্তার জয় বিশ্বাস একটি টেলিকম অপারেটর কোম্পানিতে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। সেখান থেকে অবৈধ পন্থায় সিমকার্ড সচল ও ব্যবহার করার কৌশল রপ্ত করেন। এছাড়া তার এক সহকর্মী বন্ধু বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনিও চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ পন্থায় সিমকার্ড সংগ্রহ করে জয়ের কাছে সরবরাহ করতেন।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথম যখন সিম ব্যবহার নিয়ে হাঙ্গামা শুরু হলো, সে সময় থেকে সোচ্চার হয়েছিলাম। এ সময় তদন্ত করে দেখা গেল, অন্যের নামে বায়োমেট্রিক করা অজস্র নিবন্ধিত সিম তারা ব্যবহার করছে। রাস্তার পাশে যারা নিবন্ধিত সিম বিক্রি করে বা কোনো দোকানদারকে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেও একটা নিবন্ধিত সিম দিয়ে দেয়।’
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের ফুটপাতের পাশে টেবিল নিয়ে সিম বিক্রি করছে একটি চক্র। ওদের ডিভাইসে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলে না বলে কয়েকবার করে নিচ্ছে। তা গোপনে সংরক্ষণ করে। দোকানে গেলে সিম কিনতে এক-দেড়শ টাকা লাগে। কিন্তু রাস্তার পাশে তিন টাকায় সিম পাওয়া যায়।
দেশে সিমকার্ডের বিশাল মার্কেট। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১৮ কোটি নিবন্ধিত সিম আছে। নয় লাখ রিটেলার আছে। দেশের বিশ থেকে পঁচিশ লাখ জায়গায় সিম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি সিম বিক্রি হয়। যাদের (বিটিআরসি) এটা মনিটারিং করার কথা, তারা মনিটারিং করছে না বলে অভিযোগ করেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
অবৈধ সিম বিক্রির সিন্ডিকেটে বিটিআরসির অনেক কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে মন্ত্রী বরাবর চিঠিও দিয়েছি। তাতে বলেছি বিটিআরসির ভেতরে এমন দুষ্কৃতিকারীও আছে। এদের বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অবৈধ সিম নিয়ন্ত্রণে যেই পদ্ধতি দরকার, আমরা সব পদ্ধতিই ফলো করি। আমাদের দিক থেকে যে টেকনোলজি ডেভেলপ করার দরকার, সেটাও করেছি। সিম তো বিক্রি হয় একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। আমাদের সঙ্গে যেই বিষয়টা আছে, সেটা হলো সিস্টেম। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া কোনো সিম দেয়ার সুযোগ নেই।’
অপরাধীরা নতুন নতুন ফন্দি পাতে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা হয়তো অপরাধ করার জন্যই অনিবন্ধিত ও অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম নেয়ার জন্য কাজ করে। এটা তারা পরিকল্পিতভাবে করে। এই কাজের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদের কিছু করার থাকলে, অবশ্যই সেটা করব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, সিমের যেসব এজেন্ট এ ধরনের কাজ করে, এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। এটা বিটিআরসির দেখার বিষয় না।
নিদিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে একসঙ্গে দু-তিনটা সিম নিবন্ধিত হলে তা বিটিআরসির নজরে আসে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কাজটা টেলকোর করার কথা। তাদের কাছে সিমকার্ডের নিয়ন্ত্রণ আছে। সিমের নিবন্ধন তাদের কাছেই হয়। টেলকোগুলো যদি কাজটা না করে, অভিযোগ পেলে তাদের সতর্ক করে দিব।’
সিমের এই কারসাজির সঙ্গে বিটিআরসির কর্মচারীরা জড়িত এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি সিমকার্ড চোখেও দেখে না। তারা কীভাবে জড়িত! সিমের বিষয়ে বিটিআরসির কিছুই করার নেই, সব করে টেলকো। তারপরেও যদি বিটিআরসির কারও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বা অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
বিটিআরসির নিয়ম হলো- যদি কারও জাতীয় পরিচয়ত্র না থাকে কিংবা যাচাই করার সময় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ওই গ্রাহক ছয় মাসের জন্য পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনো ছবিযুক্ত বৈধ পরিচয়পত্র দিয়ে সিম পুনর্নিবন্ধন করতে পারবেন। ছয় মাসের মধ্যে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে দেবেন।