মিশিগানে সাহিত্য সভা

প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসারে অঙ্গীকার

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:২০

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রোববার বিকেল ৬টায়, ওয়ারেন সিটির ১২ মাইলে অবস্থিত আলিফ রেস্টুরেন্টের হলরুমে মিশিগানে বসবাসরত সৃষ্টিশীল ব‍্যক্তিবর্গের উদ্যোগে এক সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাস জীবনের ব্যস্ততা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও এ ধরনের আয়োজন প্রমাণ করে, সাহিত্যিকদের প্রাণের টান এখনো ভাষা ও সংস্কৃতির মাটির সঙ্গে অটুটভাবে যুক্ত।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি ও ছড়াকার হেলাল উদ্দীন রানা। তিনি উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সাহিত্য সমাজকে কেবল বিনোদন দেয় না, বরং মানুষের চিন্তাকে প্রসারিত করে, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারাবাহিকতা দেয়। সভায় উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকেরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন এবং প্রবাসের মাটিতে বাংলা সাহিত্যের আলো জ্বালিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কবি জাফর ওবায়েদের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় সাহিত্য আলোচনা হয়ে ওঠে আরও সমৃদ্ধ ও ভাবগম্ভীর। কবি ও ছড়াকার জয়নাল আফসার সাহিত্যচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “প্রবাসে থেকেও আমরা বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের শিকড়কে আঁকড়ে ধরতে পারি। এ সাহিত্য আমাদের অস্তিত্বের অংশ।”
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট মাহমুদ রহমান এবং কবি হাবিব রহমান তাঁদের বক্তব্যে সমকালীন সাহিত্যের প্রবণতা, পাঠাভ্যাসের পরিবর্তন এবং পাঠাবিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রবাসী লেখক-কবিদের আরও দায়বদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
অন্যান্যদের মধ্যে কবি ও ছড়াকার হোসাইন মোহাম্মদ কামরুল, আবু কাওছার, তানভীর আহমদ, আবু হাসনাত, মোঃ শহিদ আলী, হারিছ উদ্দীন প্রমুখ সরব উপস্থিতি ও প্রাণবন্ত আড্ডার মাধ্যমে সাহিত্য সভাকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। তাঁদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, সাহিত্যচর্চা কেবল মঞ্চে কবিতা পাঠেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি হয়ে ওঠে বন্ধুত্ব, ভাবের আদানপ্রদান এবং সামাজিক সংহতির মাধ্যম।
সভাপতি হেলাল উদ্দীন রানা তাঁর সমাপনী বক্তব্যে সার্থক ও কার্যকর সাহিত্য সৃষ্টির জন্য সৃজনশীল মানুষের পারস্পরিক ভাবের আদানপ্রদান, সম্মিলন ও নিয়মিত পঠনপাঠনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমাদের পরিচয়ের মূলভিত্তি। আমেরিকার মাটিতে থেকেও এই সাহিত্য আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সাথে যুক্ত করে।”
এ সভা আরও একবার স্পষ্ট করে দিল—বাংলা সাহিত্য প্রবাসী সমাজের কাছে কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা ও পরিচয়ের ধারক। কবি-সাহিত্যিকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিশ্রুতি দেন যে, তাঁরা প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে অবিচল থাকবেন।