নষ্ট মানুষ
ফরহাদ সাহেব বারান্দায় বসে চা পান করছিলেন। তার সামনে আজকের দৈনিক পত্রিকা রাখা। একটু আগেই তিনি পত্রিকাটা উল্টেপাল্টে দেখেছেন। চা শেষ করে আবারও দেখবেন। তখন হবে একটু ডিটেইলস দেখা। এরপর রাতে বাছাই করা নিউজগুলো পড়ে ঘুম।
ছুটির দিনে এই এক নেশা তার। অবশ্য পত্রিকাগুলোতে ভালো খবর তিনি খুঁজে পান না। এখানে খুন, ওখানে ধর্ষণ হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। মানুষ মানুষকে ঠকাচ্ছে। তখনই তিনি শুনতে পেলেন, বাইরে হ্যান্ড মাইকে কেউ বলছে, ‘নষ্ট ব্যাটারি, নষ্ট মোবাইল, নষ্ট সাইকেল, নষ্ট লোহা বদল দেওয়া হয়’।
ফরহাদ সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দেশের নষ্ট মানুষগুলোকে যদি এভাবে বদল দেওয়া যেতো। দেশটা নষ্ট মানুষে ভরে যাচ্ছে। কেন যে এই সিস্টেম নাই! কাপের চা শেষ হলেও তিনি চুমুক দিতে থাকেন। তার মনোযোগ এখন বাইরের মাইকিংয়ের দিকে!
সত্য-মিথ্যা
বাসে উঠেছি। দুপুরের ক্লান্তিতে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরই ‘একটু চাপেন ব্রাদার’ বলে একজন ধপাস করে আমার চাপার অপেক্ষা না করেই প্রায় কোলের ওপর বসে পরলেন। আমি বিরক্ত হয়ে সরে গেলাম।
আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম, ভদ্রলোক পান চিবোচ্ছেন। পান চিবানো শেষে বললেন, ‘ভাই ঘুমোচ্ছেন নাকি? এত গরমে ঘুম হয়?’
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘আমি ঘুমাচ্ছি না।’
ভদ্রলোক বলে চললেন, ‘এই যে আপনি বললেন, ঘুমোচ্ছেন না। খাঁটি মিথ্যা কথা। আপনি নাক ডাকছিলেন। আমি স্পষ্ট শুনেছি। আমার শ্রবণশক্তি মারাত্মক।’
‘ভাই বাদ দেন। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। এখন জেগে আছি। খুশি?’
‘এই তো ভাই, রেগে গেলেন তো? আসলে আমরা বিনা কারণেই মিথ্যা কথা বলি। অবশ্য আমি না। আমি বিনা কারণে মিথ্যা বলি না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু হলে বলি। অথচ খালি আপনি না, অধিকাংশ মানুষই বিনা কারণেই মিথ্যা বলে। এরা যে মিথা বলছে, সেটাও আজকাল বুঝতে পারে না।’
আমি বিরক্ত হয়ে ভদ্রলোকের প্যাঁচাল শুনছি। একসময় তিনি থামলেন। আমি আবারও মাথা হেলান দিয়ে চোখ বুঁজি। আধঘুম হয়েছি। হঠাৎ ভদ্রলোকের ফোন এলো। ঘুম চোখেই শুনতে পেলাম, তিনি যেন কার সাথে কথা বলার সময় বললেন, ‘আরে ভাই, আমি তো এখন চট্টগ্রাম যাচ্ছি। ফিরবো দিন সাতেক পরে।’ অথচ আমাদের বাস তখন আগারগাঁওয়ের সিগনালে আটকে আছে!