পূর্ব লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দু'দিনব্যাপী দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৪। সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য-এর আয়োজনে প্রতিবছরের মত এবারও ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর শনি ও রোববার পুর্ব লন্ডনের মাইল্যান্ড পার্কের দ্যা আর্ট প্যাভিলিয়নে প্রতিদিন দুপুর ১.৩০ থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে বই মেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
বইমেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা বাংলাদেশ থেকে আগত প্রখাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক কবি শামিমা আজাদ সহ লন্ডনের এবং অন্যান্য দেশের বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, গুণীজনরা । উদ্বোধনী অনুষ্টানে বক্তারা বলেন, বইমেলা একটি জাতির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সেই জাতিকে করে সম্মানিত। নানান প্রতিকূলতার মুখে বিদেশের মাটিতে যারা এ আয়োজন করেন তাদেরকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
যুক্তরাজ্যের বই মেলাকে কেন্দ্র করে এবছর এ পর্যন্ত প্রবাসী লেখকদের ১৫ টির অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে, মেলার আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি এ কে এম আব্দুল্লাহ বলেন, এবছরও ইউরোপ আমেরিকা থেকেও আমাদের বই মেলায় অতিথিগণ যোগ দিয়েছেন, ভিসা জটিলতার কারনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা ও অতিথিরা আসতে পারেননি।
সংগঠনের সভাপতি কবি, লেখক ময়নূর রহমান বাবুল বলেন, বাংলাদেশের অমর একুশের বই মেলার পরে লন্ডনের এই বই মেলা আমার জানামতে দ্বিতীয় বৃহৎ বইমেলা হিসাবে পরিচিত। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ১৫/২০ টা বই এবং ২/৩টা সংকলন, লিটলম্যাগ প্রকাশিত হচ্ছে ।
বিশেষ করে প্রবাসী লেখক কবি সাহিত্যিকদের জন্য একটা বিশাল ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। আমরা সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ এই ক্ষেত্রটা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে চাই। বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রবাসে আমাদের আত্মপরিচয় এর সংযোগ স্থাপনের এক বড় মাধ্যম। এর মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করে দিতে হবে।
আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে এই বই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, পাঠক, প্রকাশক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের মধ্যে যেন একটি আন্তঃসংযোগ সম্পর্ক স্থাপিত হয় । অন্যান্য বছরের ন্যায় এববারও বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকাশনী সংস্থা মেলায় যোগদেন। বইমেলায় সব বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে ।
কেউ বই কিনছেন , কেউ বা কবিতা আবৃত্তি শুনছেন, কেউবা আবার স্বরচিত কবিতা পাঠ করছেন । সব মিলিয়ে মেলা একটি উৎসবে পরিণত হয় । মেলার ছিল আলোচনা পর্ব ,কমিটি পরিচিতি , তৃতীয় বাংলা 'র মোড়ক উম্মাচন , সাহিত্য সম্মাননা পদক প্রদান, নিত্য, কবিতা আবৃত্তি, সেমিনার, বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইয়ের উম্মেচন , কবি পরিচিতি ও স্বরচিত কবিতা পাঠ , নতুন প্রজন্মের অনুষ্ঠান , পয়েট্রি ইন আদার ল্যাংগুয়েজ, প্রকাশকদের সাথে মতবিনিময় ও সম্মাননা স্মারক প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমাপনী। বহুভাষা ও সংস্কৃতির ব্রিটেনে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন কাজ ও সাংগঠনিক দক্ষতাসহ সার্বিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবারের সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য সাহিত্য পদক লাভ করেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি।
সম্মাননা পদক, নগদ অর্থ ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং টাওয়ার হ্যামলেটস রারার স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ। এই পদক প্রাপ্তিতে তিনি জানান, এটি তার কাজের স্বীকৃতি এবং তিনি এই সম্মানের জন্য সম্মিলিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন এইরকম সম্মান জানালে গুণীজনের সৃষ্টি হবে সমাজে। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- লন্ডন-বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, সংগঠনের সভাপতি কবি ও লেখক ময়নূর রহমান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক কবি কে এম আব্দুল্লাহ প্রমুখ।