গুনাহের কারণে মানুষ ঈমান থেকে দূরে সরে যায়। অবিশ্বাস, আল্লাহর অবাধ্যতা, জুলুম, অশ্লীলতাসহ অন্যান্য গুনাহের কারণে মানুষের অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। এই মরিচার কারণে মানুষ আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যায়। ঈমান থেকে দূরে সরে যায়। মরিচা যেমন লোহাকে খেয়ে নষ্ট করে দেয়, তেমনি গুনাহের মরিচা মানুষের অন্তরের যোগ্যতা নিঃশেষ করে দেয়। ফলে তারা ভাল ও মন্দের পার্থক্য বোঝে না। পুরোপুরি যুক্তিসংগত কথাও তাদের কাছে গল্প বলে মনে হয়। আল্লাহর সত্য কালামও তার কাছে অসত্য মনে হয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِ اٰیٰتُنَا قَالَ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ كَلَّا بَلۡ رَانَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ مَّا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, ‘পূর্ববর্তীদের রূপকথা।’ না, এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই তাদের অন্তরের ওপর মরিচা জমে গেছে। (সুরা মুতাফফিফীন: ১৩, ১৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসুল (সা.) বলেন, বান্দা যখন পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে। যদি সে পাপ থেকে তওবা করে, তাহলে সেই কালো বিন্দু পরিষ্কার হয়ে যায়। আর তওবার পরিবর্তে যদি পাপের পর পাপ করেই যায়, তাহলে সেই কালো বিন্দুটি আরো বৃহৎ আকার ধারণ করে। এমনকি তা তার গোটা অন্তরে ছেয়ে যায়। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৩৪)
সুরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা কাফেরদের অন্তরে সিল বা মোহর মেরে দেওয়ার কথা বলেছেন। এটাও মরিচা পড়ে যাওয়ার মতোই। অতিরিক্ত জুলুম ও পাপাচারের কারণে মানুষের অন্তর হেদায়াত থেকে বিমুখ ও বঞ্চিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا سَوَآءٌ عَلَیۡهِمۡ ءَاَنۡذَرۡتَهُمۡ اَمۡ لَمۡ تُنۡذِرۡهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ خَتَمَ اللّٰهُ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ وَ عَلٰی سَمۡعِهِمۡ وَ عَلٰۤی اَبۡصَارِهِمۡ غِشَاوَۃٌ ۫ وَّ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, তুমি তাদেরকে সতর্ক কর কিংবা না কর, উভয়ই তাদের জন্য বরাবর, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তরে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাআজাব। (সুরা বাকারা: ৬, ৭)
জুলুম ও পাপাচারের কারণে কাফেরের অন্তরে যেমন মরিচা পড়ে, মুমিনের অন্তরেও মরিচা পড়ে। অন্তরে গুনাহের এই মরিচার কারণে মুমিন ব্যক্তি নেক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নেক কাজে আনন্দ পায় না। গুনাহের কাজে আগ্রহ বোধ করে, আনন্দ পায়। বান্দা যদি দ্রুত গুনাহ থেকে তওবা না করে, তাহলে এই মরিচা বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে তওবার তওফিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ঈমান থেকেও বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে আল্লাহ তাআলা যদি হেফাজত না করেন।
তাই গুনাহ হলে দ্রুত তওবা করুন। আল্লাহ রাহমানুর রাহিম। তিনি গুনাহগার বান্দাকে বারবার ক্ষমা করেন। গুনাহগার যখনই যথাযথভাবে লজ্জিত হয়, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং তওবা করে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি গাফুর ও রাহিম অর্থাৎ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আল্লাহ বলেন,
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.
বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)