উম্মতে মোহাম্মদির প্রত্যেক ব্যক্তি- নারী ও পুরুষের জন্য শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা বাঞ্ছনীয়। তাঁর ওপর দরুদ পড়তে স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এবং আমার ফেরেশতারা তাঁর (রসুল) ওপর দরুদ পাঠপূর্বক সালাম প্রেরণ করে থাকি, হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর ওপর দরুদ পাঠ ও সালাম প্রেরণ কর।’ (সুরা আহজাব-৫৬)।
এ নির্দেশনা বলে, প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ওপর নবীজির প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ সাব্যস্ত হয়েছে। পবিত্র কোরআন ছাড়াও হাদিসে দরুদ শরিফ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলতের বিশদ বিবরণ রয়েছে।
দরুদপাঠে অশেষ সওয়াব, রহমত, বরকত ও মাগফেরাত পাওয়া যায়। প্রিয় নবীর প্রতি মহব্বত নিয়ে দরুদ পাঠ করা উত্তম ইবাদত। বিশ্বনবী তাঁর উম্মতকে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পেয়ারা নবীর নাম শোনার পর যে উম্মত তাঁর প্রতি দরুদ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তাকে বখিল ও কৃপণ বলে ভর্ৎসনা করেছেন।
তাই মুসলিম ফেকাহবিদরা বলেন, জীবনে একবার প্রতিটি মুসলিমের জন্য নবীজির নাম শুনে বা উচ্চারণ করে তাঁর প্রতি দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পাঠ করা ফরজ, কোনো মাহফিলে নবীজির নাম শুনে প্রথমবার দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব এবং পরে বারবার তাঁর নাম শুনে দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব ও উত্তম সওয়াবের কাজ।
যদি একবারও পাঠ না করে তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। তাই নবীজির নাম শুনে কোনো মাহফিলে সবার উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পাঠ করা উচিত; যাতে ভুলে যাওয়া শ্রোতামণ্ডলীর সবাই দরুদ আদায় করে নিতে পারে। হাদিসশাস্ত্রের ছাত্ররা হাদিসের কিতাব পড়ার সময় নবীজির নাম শুনে সবাই উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পাঠ করে থাকেন। দরুদের সুমধুর উচ্চ আওয়াজে দরসগাহ বারবার গুঞ্জরিত হয়।
কেননা যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করে, সে ব্যক্তি আল্লাহর খাস বান্দা ও নবীজির সৌভাগ্যবান উম্মত হিসেবে পরিগণিত হবে। দুনিয়ায় স্বপ্নযোগে প্রিয় নবীর দিদার লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আখেরাতে তাঁর শাফায়াতলাভে ধন্য হবে।
নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাঁর ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন।’ (মুসলিম) নবীজি বলেন, ‘যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয়, সে যেন তৎক্ষণাৎ আমার ওপর দরুদ পড়ে।
হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দার দোয়া, মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝোলানো থাকে, তার কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না ও কবুল হয় না, যতক্ষণ না প্রিয় নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)।
যে ব্যক্তি নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাঁর ১০টি মর্যাদা দান করেন, ১০টি নেকি দান করেন এবং ১০টি গুনাহ মাফ করে দেন। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের অন্ধকারে আলোকময় হবে এবং কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশের নিকটবর্তী হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর সেই বৈঠকে আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ৮০ বছরের সগিরা গুনাহ মাফ করে দেবেন।’
নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি মহব্বতের সঙ্গে দরুদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ এমন একজন বিশাল আকৃতির ফেরেশতা তৈরি করে দেন, যে দরুদ পাঠকারীর ওপরে কেয়ামত পর্যন্ত রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকবে।’
যে ব্যক্তি মহব্বতের সঙ্গে নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ দুনিয়ার সব পেরেশানি দূর করে দেবেন। রিজিকে বরকত দান করবেন, ইজ্জত-সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন, শান্তি ও নিরাপত্তা দান করবেন, সব আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে দেবেন এবং মহান রব্বুল আলামিন প্রিয় নবীর অসিলায় তাঁর উম্মতের সব দোয়া ও ইবাদত কবুল করে নেবেন।
প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, ‘যখন আমার কোনো উম্মত মহব্বতের সঙ্গে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে আমার প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করে, তখন আল্লাহর নিযুক্ত একদল নুরের ফেরেশতা সেই উম্মতের প্রেরিত দরুদ ও সালাম পাঠকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা-পরিচয়সহ আমার কাছে পৌঁছে দেয়।’ সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং যার অসিলায় কুল-কায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে, আপনার আমার এ পৃথিবীতে আগমনের সৌভাগ্য হয়েছে, সেই মহামানব (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বতে দরুদ সালাম পেশ করে দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনে আমরা ধন্য হই। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন।