‘আল্লাহু আকবার’ অর্থ আল্লাহ মহান, সবচেয়ে বড়। তার চেয়ে বড় ও মহৎ কেউ নেই। আল্লাহ ছাড়া বিশ্বজগতে আর কোনো সত্তা এই গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। এটি আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ জিকির। কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাকবির বলার বা তার বড়ত্ব বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَ رَبَّكَ فَكَبِّرۡ ۪
তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সুরা মুদ্দাসসির: ৩)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡ لَمۡ یَتَّخِذۡ وَلَدًا وَّ لَمۡ یَكُنۡ لَّهٗ شَرِیۡكٌ فِی الۡمُلۡكِ وَ لَمۡ یَكُنۡ لَّهٗ وَلِیٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَ كَبِّرۡهُ تَكۡبِیۡرًا
আর বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, রাজত্বে তাঁর কোন শরিক নেই এবং অপমান থেকে বাঁচতে তাঁর কোনো অভিভাবকের দরকার নেই এবং তুমি পূর্ণরূপে তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। (সুরা ইসরা: ১১১)
নামাজের শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা ফরজ। এই তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ আদায়কারী নামাজে প্রবেশ করে এবং নামাজের বাইরের সব কাজকর্ম তার জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা। তাকবিরে তাহরিমা নামাজের বাইরের সব কাজ হারাম করে দেয় আর সালাম তা হালাল করে। (সুনানে তিরমিজি)
নামাজের ভেতরেও বার বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হয়। আজান ও ইকামতেও বার বার উচ্চারিত হয় ‘আল্লাহু আকবার’। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানে ৩০ বার, ইকামতে ৩০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ উচ্চারিত হয়। পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজে তাকবির উচ্চারিত হয় ৯৪ বার, সুন্নত ও নফল নামাজগুলোতে প্রায় পাঁচশত বার।
এছাড়া সাধারণ জিকির হিসেবে ‘আল্লাহু আকবার’র অপরিসীম ফজিলত বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা আমার কাছে জগতের সব কিছুর চেয়ে প্রিয়। (সহিহ মুসলিম)
বনি সুলায়ম গোত্রের এক সাহাবি বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তার নিজের হাতে গুণে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা দাঁড়িপাল্লার অর্ধেক, আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা দাঁড়িপাল্লাকে পূর্ণ করা আর ’আল্লাহু আকবার’ আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়। (সুনানে তিরমিজি)
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পশুরক্ষক আবু সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটি জিনিস মিজানে অনেক ভারী! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ’আল্লাহু আকবার’, ’সুবহানাল্লাহ’ ও ’আলহামদু লিল্লাহ’ আর নেক সন্তান, যে মারা গেলে মুসলমান বাবা-মা তাতে সওয়াব কামনা করে। (তাবরানি)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ চারটি বাক্য নির্বাচিত করেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু লিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’। সুতরাং যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হবে এবং তার ২০টি গোনাহ মোচন করা হবে। যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, তারও অনুরূপ সওয়াব হবে ও পাপ মোচন করা হবে। যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, তারও অনুরূপ সওয়াব হবে ও পাপ মোচন করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ’আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলবে, তার জন্য ৩০টি নেকি লেখা হবে এবং তার ৩০টি গোনাহ মোচন করা হবে। (মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ জিকির ‘আল্লাহু আকবার’ এবং অন্যান্য জিকিরগুলো যেন বারবার আমাদের মুখে উচ্চারিত হয়। আমাদের জবান যেন আল্লাহর জিকিরে সর্বদা সিক্ত থাকে।
আল্লাহর স্মরণ সর্বক্ষণ অন্তরে জাগরুক রাখা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজে আল্লাহর বিধান ও সন্তুষ্টির কথা মনে রাখা একজন মুমিনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। জিকির শুধু মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার নাম নয়, আল্লাহর যে কোনো ধরনের আনুগত্য ও ইবাদতও জিকির। দোয়া, ইস্তেগফার, তিলাওয়াত ও দ্বীনি আলোচনাও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করা বা আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ব ও বড়ত্বের ঘোষণা মুখে উচ্চারণ করাও আল্লাহর জিকির এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।