প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ঈমানের পর গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আমল হলো প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। নামাজের পরই সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতেক্যের ওপর বছরে এক মাস রোজা রাখা ফরজ।
রমজানে রোজার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে সব থেকে বেশি। একবার বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা. বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন।’ রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই। (নাসায়ি)
রমজানের পুরো মাসটি মুমিনের জীবনে বরকত বয়ে আনে। এ মাসের প্রত্যেক দশকে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য বিশেষ তিনটি পুরস্কার রেখেছেন। পুরো মাস রোজা পালনকারীদের ক্ষমার ঘোষণা করেছেন। রমজানের রহমত,বরকত একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুমিনের জন্য বিশেষ পুরস্কার হিসেবে শয়তানের হাত থেকে নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করা হয়। পুরো মাস শয়তানকে বন্দি রাখা হয়।
শয়তান বন্দি
রাসূলে করিম সা. বলেছেন, মাহে রমজান এলে এর প্রথম রাত থেকে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়। জাহান্নামের সব কটি দুয়ার রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় পবিত্র জান্নাতের সব কটি দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং একজন ফেরেস্তা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে কল্যাণকামী অনুসন্ধানী! তুমি অনুসন্ধান কর ও এগিয়ে চল। আর অকল্যাণকামী পাপাত্মাদের বলতে থাকেন, তুমি থাম।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।
এই মাসের তিন ভাগ
হজরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের মাঝে খতিব হিসেবে দাঁড়ালেন, বললেন (মাহে রমজান) এমন একটি মাস যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যবর্তী ভাগ মাগফেরাত বা ক্ষমা আর শেষ ভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অর্থাৎ রমজান মাসের ৩০ দিনের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)
গুনাহ থেকে মুক্তি
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস, ১৮০২)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘...কিন্তু রোজার বিষয়টা আলাদা। কেননা তা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে’ (বুখারি, ৭০৫৪)।
জান্নাতে রোজাদারের জন্য বিশেষ দরজা
হজরত সাহল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতে রাইয়্যান নামে একটি দরজা আছে। কেয়ামতের দিন রোজাদাররা উক্ত দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ উক্ত দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে না। (কেয়ামতের দিন) রোজাদাররা কোথায় এই বলে ডাকা হবে। রোজাদাররা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা উক্ত দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে, তখন সেটিকে বন্ধ করে দেয়া হবে। কিছুতেই অন্য কেউ আর প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি শরিফ, হাদিস, ১৭৯৭)
ইবাদতের কয়েকগুণ বেশি সওয়াব
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি নফল আদায় করল।’ (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬৮)
রমজানের রোজা রাখার শুরুতে সেহরি খাওয়া হয় এবং রোজা শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে। এই দুইটি খাবারে বরকত রয়েছে। রাসূল সা. সেহরিকে বরকতময় খাবার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা সেহরি খাও। কারণ, সেহরিতে বরকত আছে। (বুখারি, ১৮২৩, মুসলিম, ১০৯৫)
মহিমান্বিত রজনী শবে কদর
রমজানে মুমিনের অন্যতম পাওনা হলো শবে কদর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে সমভিব্যহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা বা ফজর পর্যন্ত। (সূরা কদর)
শবে কদর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাযিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তার সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম শরীফ)