সুচিন্তায় ফুল ফোটে মুমিনের হৃদয়ে

মো. আবদুল গনী
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৯

মানুষ চিন্তাশীল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টিরাজির মধ্যে বিবেচনা, চিন্তাশীলতা ও গবেষণার মতো শ্রেষ্ঠ গুণের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন।
চিন্তাশীলতা, সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা মানবজাতিকে সব প্রাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছে। স্বাভাবিক চিন্তা দুই ধরনের-একটি সুচিন্তা অপরটি হলো কুচিন্তা। সুচিন্তা কল্যাণকর আর কুচিন্তা ক্ষতিকর। সুচিন্তা ইবাদতও বটে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সুধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ’। (সুনানে আবি দাউদ)।
পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি অত্যন্ত পবিত্র। অতএব, আপনি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-১৯১)। তিনি আরও বলেন, আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আন নাহল-৪৪)।

তিনি আরও বলেন, তারা কি নিজেদের অন্তরে চিন্তা করে (ভেবে) দেখে না আল্লাহ আসমানগুলো, জমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকেই তো তাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। (সূরা আর রুম-০৮)।
চিন্তাশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বললেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে আয়েশা, আমাকে আমার রবের ইবাদত করতে দাও’।
আমি বললাম, হে রাসূল, আমি আপনার পাশে থাকতে ভালোবাসি এবং যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালোবাসি। তারপর আয়েশা (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ওজু করলেন এবং সালাত আদায়ে নিবিষ্ট হলেন ও কাঁদতে থাকলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন উত্তরে তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না এ রাতে আমার ওপর একটি আয়াত নাজিল হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করল এবং চিন্তা-গবেষণা করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য।’ তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান-৬২০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর নেয়ামতরাজি সম্পর্কে চিন্তা কর, আর আল্লাহর ব্যাপারে চিন্তা কর, অর্থাৎ আল্লাহর বিধান মানার বিষয়ে ভাব। (সুনানে বায়হাকি)।
প্রখ্যাত সাহাবি আবু দারদা (রা.) বলেন, এক ঘণ্টার চিন্তা সারা রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ফুজাইল (রহ.) বলেন, ফিকর তথা চিন্তাশীলতা অনেকটা আয়নার মতো, চিন্তা তোমাকে কোনটি ভালো কোনটি মন্দ তা দেখাবে। ইবরাহিম আন নাখয়ি বলেন, ‘আল ফিকর মুখখুল আকল’ তথা চিন্তাশীলতা আকল তথা বিবেক বিবেচনার মূল। আবু সুলাইমান বলেন, তোমরা কান্নার মাধ্যমে চোখের পরিচর্যা কর আর চিন্তার মাধ্যমে আত্মার পরিচর্যা কর। বিশর আল হাকি (রহ.) বলেন, মানুষ যদি আল্লাহর আজমত তথা বড়ত্ব সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করত তাহলে সে কখনো অবাধ্য হতো না।
সুচিন্তা মানবজীবনে প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। চিন্তশীলতার সুফল অত্যধিক। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুফল হলো-১. এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এর সাওয়াবের পরিসর অনেক বড়। ২. চিন্তাশীলতার মাধ্যমে মানুষের মহান প্রভু সম্পর্কে নির্ভেজাল ও বিশুদ্ধ ধারণা পায়। ৩. মানুষ নিজের প্রকৃত পরিচয় পায়, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে নিজের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়। ৪. চিন্তাশীলতার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ৫. চিন্তাশীলতা মানুষকে ইহলৌকিক জীবনে সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। ৬. সামষ্টিক চিন্তাশীলতা জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য মাইলফলক। ৭. চিন্তাশীলতা ব্যক্তিকে গবেষণার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ৮. সুচিন্তা ব্যক্তিকে উদার ও পরোপকারী হতে সাহায্য করে। ৯. সুচিন্তা মানুষকে যাবতীয় অপরাধ ও পাপাচার থেকে সুরক্ষা দেয়। ১০. সুচিন্তা ব্যক্তিকে পরমপ্রিয় ও জনপ্রিয় করে তোলে।
পরিশেষে, মহান আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সুচিন্তা ও সুন্দর মননের অভ্যাস গড়ে তুলে উভয় জাহানের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।