মসজিদে নববি ইসলামে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মসজিদ। মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করার সওয়াবও অন্যান্য মসজিদে নামাজ আদায়ের চেয়ে অনেক বেশি। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেছেন, আমার এ মসজিদে এক নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সুনানে ইবনে মাজা ১৪০৬, মুসনাদে আহমাদ: ১৪৬৯৪)
মসজিদে নববির একটি অংশকে হাদিসে ‘রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ’ বা জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়েছে। এ অংশটি মসজিদে নববির সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ স্থান। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘আমার ঘর (বর্তমানে যে জায়গায় নবিজির (সা.) কবর) ও মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি আর আমার মিম্বর আমার হাউজের উপর অবস্থিত। (সহিহ বুখারি:১১৯৬, সহিহ মুসলিম: ২৪৬৩)
নবিজি (সা.) এই জায়গায় নামাজ পড়তে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনে আকওয়ার সঙ্গে মসজিদে নববিতে যেতাম। তিনি মুসহাফের নিকটবর্তী পিলারের কাছে (রিয়াজুল জান্নাতে) নামাজ পড়তেন। আমি একদিন তাকে বললাম, আপনাকে দেখি এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে বেশি আগ্রহী? তিনি বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে আগ্রহী দেখেছি। (সহিহ বুখারি: ৫০২; সহিহ মুসলিম: ৫০৯)
রিয়াজুল জান্নাত দৈর্ঘে ২২ মিটার, প্রস্থে ১৫ মিটার। বর্তমানে এই জায়গায় সবুজ-সাদা রঙের কার্পেট বিছানো থাকে। মসজিদের অন্য কার্পেটগুলো লাল রঙের। ভিন্ন রঙের কার্পেট দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না রিয়াজুল জান্নাতের সীমানা।
রিয়াজুল জান্নাতের ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ বা খুঁটি রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বলা হয়। আল্লাহর রাসুলের (সা.) যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। বর্তমানে খুটিগুলো মূল্যবান পাথরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ খুটিগুলোর প্রত্যেকটির পৃথক নাম রয়েছে যেগুলো নবিজির (সা.) যুগের বিভিন্ন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত:
১. উসতুওয়ানা আয়েশা অর্থাৎ আয়েশা (রা.)-এর খুঁটি।
২. উসতুওয়ানাতুল-উফুদ অর্থাৎ প্রতিনিধি দলের খুঁটি।
৩. উসতুওয়ানাতুত-তাওবা অর্থাৎ তওবার খুঁটি।
৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ অর্থাৎ সুগন্ধি-ধূপ জ্বলানোর খুঁটি।
৫. উসতুওয়ানাতুস-সারির অর্থাৎ খাটের সঙ্গে লাগোয়া খুঁটি।
৬. উসতুওয়ানাতুল-হারছ অর্থাৎ পাহাদারদের খুঁটি।
৭. উসতুওয়ানাতু জিবরিল অর্থাৎ জিবরাইলের খুঁটি।
৮. উসতুয়ানাতুত–তাহাজ্জুদ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের খুঁটি।
হজ বা ওমরাহর সফরে গেলে মদিনায় যাওয়া, মসজিদে নববি ও নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবর জিয়ারত করা, নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। আল্লাহর রাসুল (সাাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে আমার ওফাতের পর হজ করলো অতঃপর আমার কবর জিয়ারত করতে এলো সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করলো। (সুনানে বায়হাকি: ৩৮৫৫)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে আরও বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করলো তার জন্য আমার সুপারিশ আবশ্যক হয়ে গেল। (সুনানে দারাকুতনি: ১৯৪)
তাই যারা হজ বা ওমরাহ পালন করতে যান, সুযোগ অনুযায়ী হজ-ওমরাহর আগে বা পরে অবশ্যই একবার মদিনায় যাবেন, নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরে সালাত ও সালাম পেশ করবেন। চেষ্টা করবেন আল্লাহর রাসুলের (সা.) অনুসরণে রিয়াজুল জান্নাত বা জান্নাতের উদ্যানে দুরাকাত হলেও নামাজ পড়ার, আল্লাহর কাছে দোয়া করার। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন!