আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাহাবি আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.) ছিলেন কুরাইশ বংশের মাখজুম গোত্রের সদস্য। তার বাবা আবুল আরকাম নামে পরিচিত ছিলেন যার আসল নাম আবদে মানাফ ইবনে আসাদ ইবনে উমর ইবনে মাখজুম এবং তার মা ছিলেন বনু খুজাআ গোত্রের উমাইমা বিনতে আল হারিস। তার দাদা আবু জুনদুব আসাদ ইবনে আবদুল্লাহ তার যুগে মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন।
আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.) ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন। বিখ্যাত সাহাবি আবু বকরের (রা.) দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। বর্ণিত রয়েছে, আবু বকর ইসলাম গ্রহণের পর ওসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবন ওবাইদিল্লাহ, যুবাইর ইবনুল আওয়াম ও সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তারা সবাই সাথে সাথে এ দাওয়াত কবুল করেন। পরদিন আবু বকর (রা.) ওসমান ইবনে মাজউন, আবু ওবায়দা এবং আরকাম ইবনে আবিল আরকামকে নিয়ে নবিজির (সা.) কাছে যান। তারাও সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন।
তার বাড়ি ছিল কাবা থেকে মাত্র ১৩০ মিটার দূরে সাফা পাহাড়ের পাশে। তার বাড়িটি ইসলামের ইতিহাসে দারুল আরকাম বা আরকামের বাড়ি নামে খ্যাত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রায় তিন বছর এই বাড়িটি ছিল মুসলমানদের গোপন শিক্ষাকেন্দ্র। এটিই ইসলামের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে সাহাবিরা গোপনে নবিজির সাথে দেখা করতেন এবং ইসলামের বিশ্বাস ও বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতেন।
হজরত ওমর (রা.) এই বাড়িতেই ইসলাম গ্রহণ করেন। ওমর (রা.) যখন তার বোনের বাসায় কোরআন পাঠ করে অভিভূত হন এবং বুঝতে পারেন এটা আল্লাহর কালাম, ইসলাম সত্য ধর্ম, তখন তিনি তার বোনকে বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কোথায়? আমি তার কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করবো। তখন তার বোন বলেন, তিনি দারুল আরকামে বা আরকামের (রা.) বাড়িতে আছে। ওমর (রা.) তার বোনের বাসা থেকে দারুল আরকামে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।
হজরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় মুসলমানদের শক্তি বেড়ে যায় এবং গোপনে ইসলাম প্রচার ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
নবুয়্যতের ১৩তম বছর মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দেওয়া হলে আরকাম (রা.) অন্যান্য সাহাবিদের মতো মদিনায় হিজরত করেন। এরপর তিনি আর বসবাসের জন্য মক্কায় ফিরে যান নি। ৫৫ হিজরিতে ৮৩ বছর বয়সে মদিনায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কেন দারুল আরকামকে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল?
ইতিহাসবিদ ড. আলী সাল্লাবি দারুল আরকামকে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
১. আরকাম (রা.) মুসলমান হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। তাই কারো ধারণা হতো না যে তার বাড়িতে নবিজি (সা.) ও সাহাবিরা একত্র হতে পারেন।
২. আরকাম (রা.) ছিলেন আবু জাহলের গোত্র বনু মাখজুমের সদস্য। বনু মাখজুমের সঙ্গে বনু হাশিমের দ্বন্ধ ছিল এবং বনু মাখজুমই ইসলামের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার ও সক্রিয় ছিল। তাই তার বাড়িতে একত্র হওয়ার সংবাদ প্রকাশ পেলেও ইসলাম বিরোধীরা বনু মাখজুমের একজন সদস্যের বাড়ি আক্রমণ করবে এ রকম ঝুঁকি কম ছিল।
৩. ইসলাম গ্রহণের সময় আরকাম ইবনে আবিল আরকামের (রা.) বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এত অল্প বয়সের কারো বাড়িতে মুসলমানরা একত্র হবে—এমন সন্দেহ পোষণের সম্ভাবনা কম ছিল।
৪. আরকামের (রা.) বাড়ি ছিল কাবা ‘সাফা’ পর্বতের কাছে অবস্থিত হওয়ায় সেটা মুসলমানদের একত্র হওয়ার জন্য উপযোগী একটি জায়গা বিবেচিত হয়েছিল।
৫. আরকাম (রা.) ছিলেন ওহি লেখকদের অন্যতম। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার মাধ্যমে কোরআন লিপিবদ্ধ করাতেন। সেজন্যই তার বাড়িতে নবিজি (সা.) যেতেন এবং অন্য মুসলমানরাও সেখানে নবিজির (সা.) সাথে দেখা করতেন।