ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তে উদ্যোগ, রাজাকারের তালিকায় ‘না’

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪১

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিলে যাচাই-বাছাই শুরু করেছে সরকার। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর কয়েকটি পর্যায়ে ভুয়া সনদধারীদের শনাক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিজয়ের এত বছর পর রাজাকারের তালিকা করার কাজে এ সরকার হাত দেবে না বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নেওয়া ৮৯ হাজার ২৩৫ জনের তথ্য এখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতে। এ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাবা/মা/দাদার মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই করা হবে। এজন্য তাদের তথ্য প্রকাশ করা হবে ওয়েবসাইটে।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ৩৭টি ক্যাটাগরিতে প্রায় চার হাজার মামলা রয়েছে। সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়সও পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এসব বিষয় সামনে রেখে সনদ যাচাই-বাছাই হবে, বাদ দেওয়া হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৫ বছরে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে সনদ দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এর পেছনে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করবো না। যে তালিকা আছে সেটি যাচাই-বাছাই করার জন্য ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য-নথি কোনো কিছুই সংরক্ষিত নেই, পাওয়া যাচ্ছে না। ডাটাবেজ তৈরির পরে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণিবিন্যাস করবো।’
বহু অভিযোগ আছে যে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধাদি নিচ্ছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
মুক্তিযুদ্ধের পরপরই কেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি এর কোনো ব্যাখ্যা জাতি পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা (রাজনৈতিক সরকার) তালিকা করেনি, তারাও জাতির কাছে কোনো ব‌্যাখ‌্যা দেয়নি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার কাছে এটা একটা বেদনাদায়ক বিষয়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বহু অভিযোগ আছে যে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধাদি নিচ্ছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।’
ফারুক ই আজম বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনুরাগের বশে বা কারও আত্মীয়তার বশে বা অন্য কোনো প্রলোভনে এখানে বহু মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে একটু সময় তো লাগবেই।’
‘আমরা চাই যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, কোনোভাবে যাতে তাদের মর্যাদা নষ্ট না হয়। সেটা অক্ষুণ্ন রেখেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য দুরূহ কাজ। প্রচেষ্টা রাখছি, আশা করছি, এক্ষেত্রেও সফলতা আসবে।’ বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা স্বেচ্ছায় সনদ বাতিল করে সরে গেলে তারা হয়তো সাধারণ ক্ষমা পাবেন। না হলে তাদের প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইন সংশোধন হয়ে যখন অধ‌্যাদেশ হবে, সেখানেই স্ট‌্যান্ডার্ড ঠিক করে দেওয়া থাকবে। মূলত সেই অনুযায়ী, যাচাই-বাছাইয়ের কাজটা করবে জামুকা। আমরা চাই সবগুলো অমীমাংসিত বিষয়ের নিষ্পত্তি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে একেবারে সিল করে দিতে চাই আমরা। এত বছর ধরে তো আর তালিকা করার কাজ চলতে পারে না।’
বর্তমানে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৮ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে ভাতাপ্রাপ্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন, এর মধ্যে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৬৪ জন।
এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পাঁচ হাজার ৮৯৫ জন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পাঁচ হাজার ৩৩৩ ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩৬৮ জন।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে ফরম
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগ এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ ফরম প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই সশস্ত্র যোদ্ধা নন
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছি ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণের অভিযোগ ফরম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নন, যে কোনো নাগরিক অভিযোগ করতে পারবেন। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার থাকি বা না থাকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়গুলো করে গেলে পরবর্তীসময়ে যারা আসবে তারা এ ধারা অনুসরণ করে একটা প্রকৃত জায়গায় যেতে পারবে।’

কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের যাচাইয়ের উদ্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এবং সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পদে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের সংখ্যা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মোট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সংগৃহীত তথ্য যাচাই-বাছাইপূর্বক একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আছে অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও নানানভাবে সনদ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি নিয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন। আমরা এটাকে যখন পাবলিক ডোমেইনে নিয়ে যাচ্ছি, তখন একটা ফরম উল্লেখ করছি। কারও যদি জানা থাকে বা কারও ব‌্যাপারে আপত্তি আসে- আমরা যেন সেগুলো দ্রুত যাচাই করতে পারি। যাচাই করার পর যদি প্রমাণিত হয় তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে পারবো, প্রতারণতার মামলা দিতে পারবো। মিথ‌্যা তথ‌্য দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, চাকরি থেকেও তাকে যেতে হবে।’


মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও ন্যূনতম বয়সে আসছে পরিবর্তন
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) গঠনের পর একটি সভা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর সেই সভায় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা, বয়সসীমাসহ সংশ্লিষ্ট আইন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তি-সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’-তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সব ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’

আমরা চাই সবগুলো অমীমাংসিত বিষয়ের নিষ্পত্তি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে একেবারে সিল করে দিতে চাই আমরা। এত বছর ধরে তো আর তালিকা করার কাজ চলতে পারে না।- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী

উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যাপকভাবে যারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন তাদের প্রবল আপত্তি আছে সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে। এজন্য মুক্তিযোদ্ধার যে সূত্র (সংজ্ঞা) সেটাতেও পরিবর্তন আনা দরকার। এজন্য আইন সংশোধনের দরকার আছে। উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন হবে তারা যেটা সিদ্ধান্ত দিয়ে নির্ণয় করে দেবেন, ওই অনুসারে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণিবিন্যাসটা করতে পারবো।’

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স ছিল ১৫ বছর (১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়)। ১৫ বছরের কম অনেক কিশোর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল জানিয়ে এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন আপত্তি তোলে। ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত জামুকার ৩০তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর হতে হবে।

এরপর ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সেই পরিপত্র সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।

কিন্তু এ পরিপত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার হাইকোর্টে আলাদা আলাদা রিট দায়ের করেন। এর আগে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয় কিন্তু তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে আপত্তি ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারেনি সরকারগুলো।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘মূলত মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আসবে। এছাড়া বয়সের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হবে, সেটা অবশ‌্য পরিপত্র দিয়ে বা বিধি দিয়ে করা যাবে।’

আদালতের রায় পেলে কম বয়সীদের সনদ বাতিল
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের যে ডাটাবেজ রয়েছে, সেটা অনুযায়ী দুই হাজার ১১১ জন রয়েছেন যাদের বয়স নির্ধারিত সাড়ে ১২ বছরের কম। এরা আদালতের রায়ে বহাল রয়েছেন এবং সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এমন বয়সের মানদণ্ডে উন্নীত হতে পারেননি আরও অনেকে রয়েছেন। আদালতের রায় সরকারের পক্ষে এলে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হবে বলে জানায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে বয়স ১২ বছর ৬ মাস হতে হবে। কিন্তু এর কম বয়সীদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। জেলাওয়ারি তালিকা অনুযায়ী দুই হাজার ১১১ জনের বয়স ১২ বছর ৬ মাসের নিচে। বাতিলের সিদ্ধান্তের পর কম বয়সী মুক্তিযোদ্ধারা মামলা করেন। সেই মামলাটি আপিল বিভাগে আছে। কজ লিস্টে মামলাটা শেষের দিকে এসেছে। হয়তো জানুয়ারির মাঝামাঝি আমরা আদালতের একটা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবো। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা তাদের সনদ বাতিল করবো।’

ফারুক ই আজম বলেন, ‘আদালতের কাছ থেকে যখন বিষয়টি (আপিলে রায় সরকারের পক্ষে আসবে) নির্ণিত হবে, তখন তাদের বাতিল করবোই। এটার প্রয়োজনীয় সাজার জন্য আমরা ব্যবস্থা করবো। এরা যাতে শাস্তি ভোগ করেন। অন্য যেসব মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, আমরা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করতে পারলে, তাদের ক্ষেত্রেও একই রকমের ঘটনা ও বিষয় হবে। তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়া উচিত।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় চার হাজার মামলা রয়েছে। ৩৭ ধরনের মামলা রয়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।’

রাজাকারের তালিকার কোনো তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ে
২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিতর্কের মুখে রাজাকারের তালিকা স্থগিত করা হয়।

পরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের তালিকা করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ করা হয়। এর আগে রাজাকারের তালিকা করতে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজাকারের তালিকার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি এসে মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে কোনো ফাইল পাইনি। আমরা কাছেও আসেনি। মন্ত্রণালয়ের রাজাকারের তালিকার বিষয়ে কোনো বৃত্তান্ত নেই।’

তিনি বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা করতে চাইলেও করা যাবে না। যে রকম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। অত‌্যন্ত কঠিন বিষয়। বাস্তব অস্বীকার করে তো আমরা কিছু করতে পারবো না। ৫০ বছর আগের একটা ঘটনা, কোথাও কে আছে না আছে, কার কাছ থেকে কী রকম বাস্তব নথি পেয়ে আমরা এগুলো করবো। এগুলো মনে হয় অনেক দুরূহ কাজ ও বিষয় হবে।’

সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘আমি এক দেড় বছর ধরে এ মন্ত্রণালয়ে আছি। শুনেছি আমাদের আগের মন্ত্রী মহোদয় বলতেন- তালিকা শাজাহান খান সাহেব করছেন, আর শাজাহান খান সাহেব বলছেন আমি মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দিয়েছি। আমিও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কোনো কিছু দেখিনি। আমাদের এখানে এ বিষয়ে কিছু নেই।’