‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ থেকে বাতিল হল মুজিব বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনীর নাম

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৫ জুন ২০২৫, ২৩:৫৯

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন থেকে মুজিব বাহিনী ও মুজাহিদ বাহিনীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।চলতি বছরের ৩ জুন অন্তর্বর্তী সরকার 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' জারি করে আইনটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এর ফলে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি হয়।
সংশোধনীতে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুগত যুবনেতাদের নিয়ে গঠিত আধাসামরিক বাহিনী 'মুজিব বাহিনী'কে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করা আধাসামরিক বাহিনী 'মুজাহিদ বাহিনী'র নামও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইনটিতে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দবন্ধের পরিবর্তে 'মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য' শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাস হওয়া 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন'-এ বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং প্রস্তাবনায় তার 'সোনার বাংলা' গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই আইনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'কে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের সঙ্গে সংযুক্ত।
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশে এসব উল্লেখ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের 'লক্ষ্য অর্জনের' ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এতে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে খাটো বা রাজনীতিহীন করার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

'মুক্তিযোদ্ধা' ও 'সহযোগী'-এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন

সংশোধিত আইনে 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' বা মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালনকারী চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা' নামে একটি নতুন শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে। এর অধীনে 'মুজিবনগর সরকারের' অধীন কর্মকর্তা, কর্মচারী বা দূত, চিকিৎসক, নার্স, সহকারী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যেসব এমএনএ (জাতীয় গণপরিষদ সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য) বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে সংবিধান প্রণয়নকারী পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন—তাদের এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতা, যারা ওই সময় এমএনএ ছিলেন এবং পরবর্তীতে সংবিধান প্রণয়নকারী পরিষদের সদস্য হন, তাদের 'মূল মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে বিবেচনা করা হবে না-কি 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা'র মধ্যে গণ্য করা হবে।

সরকারের ব্যাখ্যা
জনমনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক) বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমান ও চার নেতাকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা তো থাকবেনই। তাদের কেন বাদ দেওয়া হবে? মুক্তিযুদ্ধটা তো পরিচালনা করেছেনই তারা।'
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাকে এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র :টিবিএস রিপোর্ট