রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, এরশাদের জমানাতেও কবিতা লেখা হতো। শেখ হাসিনার জমানাতেও সুন্দর সুন্দর সিনেমা-গান হতো। যখন হাওয়া ভবন ছিল, তখনও বাংলাদেশে উল্লেখ করার মতো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু গত ১১ মাসে আমাদের সবকিছুতেই মনে হয় যেন কারোনার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ব্যবসায় হাহাকার, রাজনীতিতে এখন শুধু দুঃস্বপ্ন।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর রাজনীতিতে বিশাল একটা সম্ভাবনা সবাই দেখেছিল। কোনো আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ছিল না, নামও ছিল না।
আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আওয়ামী লীগের সারা জীবনের মতো কবর রচনা হয়ে গেল। কিন্তু ১১ মাস ধরে যারা ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছে, আসতে চাচ্ছে, তাদের সবারই এখন দুঃস্বপ্ন।
রনি বলেন, গত ১১ মাসে এ সরকারের যারা কর্তাব্যক্তি রয়েছেন, তারা ক্ষমতায় আসার আগে সবাই ছিলেন আমাদের এ জাতির প্রিয়মুখ। তাদের দেখলে আমাদের ভালো লাগতো, তাদের কথা শুনলে ভালো লাগতো।
তাদের নিয়ে আমরা কল্পনা করতাম— এই মানুষগুলো আকাশের চাঁদ বা তারকা হিসেবে আছেন। তারা যদি কোনো দিন ক্ষমতার চেয়ারে বসেন, আমাদের যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, সেসব অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আসবে না। তারা মিথ্যা কথা বলবে না, দেশের টাকা নষ্ট করবে না। তারা গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে একটা ওয়েস্টার্ন স্টাইলের আধুনিক গণতান্ত্রিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
এই স্বপ্নগুলো যারা আমাদের দেখাতেন বাংলাদেশে, প্রায় সব মানুষ গত ১১ মাসে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, যারা বিতর্কিত, আমরা যাদের অসভ্য বলি, চোর বলি, ডাকাত বলি, গুণ্ডা বলি, লেখাপড়া জানে না, ইয়াবা ব্যবসায়ী বলি, সেসব রাজনীতিবিদরা, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন যত বাজেভাবে তারা দেশ চালিয়েছেন বিভিন্ন সেক্টরে, সেই বাজে জিনিসগুলোর চাইতেও গত ১১ মাসে আমাদের জাতীয়, অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা, ইনস্টিটিউশনাল, যেটা ধ্বংস হয়ে যাওয়া, মানুষের মন এবং মননে বিষ তৈরি করা। এ কাজগুলো অতীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসকের আমলে যা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে গত ১১ মাসে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে, তাদের বিভিন্ন ত্রুটি, তাদের ভুল-ভ্রান্তির কারণে, তাদের মুখগুলো আজকে বীভৎস হয়ে গেছে। কালো হয়ে গেছে। সেই মুখগুলো দেখলে আমাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তাদের কথা শুনলে আমাদের গোসসা আসে। সচিবালয়ের ঘটনা, মাইলস্টোন ও উত্তরা এবং ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকার ঘটনা কোনো ইতিবাচক ফল আনেনি। এই প্রেক্ষিতে তাদের কোনো আশ্বাসকে বিশ্বাস করার মতো কোনো প্রমাণ দেশের জনগণ গত ১১ মাসে পায়নি। ফলে তাদের প্রতি আস্থা স্থাপন করা যাচ্ছে না।