আজ (২০ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস। আজ থেকে ২২৯ বছর আগে ১৭৯৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে গোড়াপত্তন হয় সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী খ্যাত আজকের বিজিবি’র।
১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে বাহিনীটির গোড়াপত্তন হওয়ার পর কালের বিবর্তনে পরিবর্তন হয় বাহিনীটির নামও । পরিবর্তন হয় অস্ত্র শস্ত্রের, পোশাকেরও। জনবল, শক্তি সামর্থও বৃদ্ধি পায় সময়ের প্রয়োজনে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) নাম বদল করে বাহিনীটির নাম দেয়া হয় বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর ২০১০ এর ৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ আইন ২০১০ পাস হওয়ার মাধ্যমে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সর্বশেষ নামকরণ হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। ঐ বছরে ২০ ডিসেম্বর বিজিবি দিবস হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়।
১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিডিআরের খাগড়াছড়ির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ওয়ালী উল্লাহ ও রামগড়স্থ ১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোসাদ্দেক হোসেনের উদ্যোগে ‘স্বার্থক এ জন্ম’ নামে সর্বপ্রথম রামগড়ে স্থাপন করা হয় বিজিবির জন্মস্মৃতিস্তম্ভ। বাহিনীটির ২০০ বছর পূর্তিতে এ স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তৎকালীন ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় এ বাহিনীর দৃষ্টিনন্দন বিশাল জন্ম স্মৃতিস্তম্ভ। এর বেদিতে বিজিবি’র সংক্ষিপ্ত জন্ম ইতিহাস লেখা ছাড়াও পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি বাহিনীটির বিবর্তনের ৮টি অবয়ব বা টেরাকোটা স্থাপন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন সমতল জেলা থেকে আগত পর্যটকরা রামগড় সদরের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা অফিস টিলা এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এ বিশাল ‘বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভে’ ঘুরে দেখেন আর জেনে নেন বাহিনীটির সুদীর্ঘকালের গৌরবময় জন্ম ইতিহাস।
বিজিবির জন্মস্মৃতিস্তম্ভের লেখা থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতকের শেষভাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে লুসাই বিদ্রোহ দেখা দিলে এ এলাকা রক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রামগড়ে মাত্র ৪৮৬ জন সৈন্য নিয়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ গঠন করে। অস্ত্র শস্ত্রের মধ্যে ছিল ৬ পাউন্ড গোলার ৪টি কামান। এছাড়া দুটি অনিয়মিত অশ্বরোহি দল ও যাতায়াতের জন্য ছিল কয়েকটি উপযোগী যানবাহন। ১৭৯৫ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে বাহিনীটির কার্যক্রম চলে। ১৮৬১ সালে এ বাহিনীকে পুনর্গঠিত করে এর নামকরণ করা হয় ফ্রন্টিয়ার গার্ডস। সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৪৫৪ জনে উন্নীত করা হয়। ঐ সময় এ পার্বত্য এলাকায় লুসাই বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করলে ১৮৭১ সালে সৈন্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করে এ বিদ্রোহ দমন করে বাহিনীটি। পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস নাম পরিবর্তন করে স্পেশাল রির্জাভবাহিনী, ১৮৯১তে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ১৯১২ সালে ঢাকা মিলিটারি পুলিশ, ১৯২০ সালে বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন অব ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস। ১৯৪৭ এ ভারত বিভক্তির পর এ বাহিনীর নামকরণ হয় ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)।
রামগড়ের ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে.কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন বলেন, রামগড়ের মাটিতে দেশের অতন্দ্রপ্রহরী ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিজিবি’র জন্ম এটি এখানকার বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
তিনি বলেন, এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস প্রজন্মের কাছে চির অক্ষুণ্ণ রাখতে এখানে বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভটি পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে রাখতে সৌন্দর্যবর্ধনসহ সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছে বিজিবি।