ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতিতে বিশ্বনীতি এখন শুধুই "আমেরিকা ফার্স্ট"। অভিবাসন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতিতে নিজের দেশকে এগিয়ে রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রাসী অবস্থান নিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ পরিকল্পনা আপাতত দৃশ্যমান নয়। তবে ভারত ইতোমধ্যে ট্রাম্পকে আপন করে নিতে নানা কৌশল নিচ্ছে।
ট্রাম্পের দুই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অগ্রাধিকার ‘অর্থনীতি ও অভিবাসন’—নিয়ে ভারত ইতোমধ্যেই ছোট-বড় ছাড় দিতে প্রস্তুত। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত চাইছে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে, বিশেষত চীন ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বজায় রাখার জন্য।
অভিবাসন ইস্যুতে ভারতের সমর্থন
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, আমরা অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে। ভারত তার অনথিভুক্ত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সবসময় প্রস্তুত। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের মধ্যে ভারতীয়রা তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী।
এদিকে, কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভারতীয় অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কানাডার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ না করলে অটোয়ার বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের তৎপরতা
ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতির সমালোচনা করলেও, বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নে ভারত নানা কৌশল নিচ্ছে। ২০২০ সালে ভারতে ট্রাম্পের সফরের সময়, মোদি প্রশাসন একটি ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশা করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তবে সাম্প্রতিক মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়াকে তার অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখছেন না, তবে ভারত কৌশলগত সুবিধা নিতে চাইবে। ভারতের কিছু ছোট ছাড় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
চীনের সঙ্গে উত্তেজনা ও ট্রাম্পের ভূমিকা
চীন-ভারত সম্পর্কেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চীনের নেতা শি জিনপিং সম্প্রতি বলেছেন, চীন ও তাইওয়ান পুনরায় একীভূত হবে। এরই মধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারত-চীন সীমান্তেও উত্তেজনা বাড়ছে। চীন হিমালয়ে একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা ভারতের জন্য পরিবেশগত ও কৌশলগত হুমকি হয়ে উঠতে পারে। মোদি প্রশাসন এই প্রকল্প বন্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে তৎপর।
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। শেখ হাসিনার সরকার ভারত-মার্কিন কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারত আগেও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছে যাতে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান নমনীয় হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বজায় রাখতে চাইবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান ভারতীয় কূটনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ হলেও, ভারত তার কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থে ট্রাম্পের মন জয় করতে মরিয়া। অর্থনীতি, অভিবাসন ও ভূরাজনীতির জটিল সমীকরণে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন কূটনৈতিক অগ্রগতির ওপর।