চট্টগ্রামে মেহজাবিন, টাঙ্গাইলে পরিমণি, ঢাকায় অপু বিশ্বাস। তেড়ে আসছে জেহাদীরা। পালাও, পালাও। হায়রে লাল স্বাধীনতা!
এখন কি বলবেন মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম? জুলাই-আগস্টে রাস্তায় তারা সোচ্চার ছিলেন, লাল স্বাধীনতার জন্য। এখন চুপ কেন?
মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী। চালাক মানুষ। কয়েক লাইনের পোস্ট দেওয়া ছাড়া তাঁকে কিছু করতে হয়নি। একের পর এক পোস্ট। এখন উপদেষ্টা। তাঁর প্রশংসিত ছবি 'টেলিভিশন'। সে ছবির ভিলেন কারেক্টারের ভূমিকায় এখন তিনি নিজে। তবে অভিনয়ে নয়, বাস্তবে।
চট্টগ্রামে কি হলো?
একটা ফ্যাশন স্টোর উদ্বোধনের জন্য বিমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গেছেন নাটকের জনপ্রিয় শিল্পী মেহজাবিন চৌধুরী। এয়ারপোর্ট থেকে রওয়ানা হয়েছেন সেই স্টোরের উদ্দেশ্যে। পথে খবর পেলেন- বিপদ। মৌলবাদী জেহাদীরা ক্ষেপেছে। একজন নারী শিল্পী দিয়ে স্টোর উদ্বোধনের 'নাজায়েজ' কাজ করতে দেওয়া হবে না। মেহজাবিন চৌধুরী প্রমাদ গুনলেন। তড়িৎ গাড়ী ইউটার্ণ করে এয়ারপোর্ট, তারপর ঢাকা।
গত সপ্তাহে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় কসমেটিক্সের দোকান উদ্বোধনের কথা ছিল নায়িকা পরীমণির। আপত্তি তুললো হেফাজত। পরীমণি আসতে পারবেন না। অবশেষে উদ্যোক্তারা তাকে ছাড়াই উদ্বোধন করলেন।
২৮ জানুযারী ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে 'সোনার থালা' রেস্তোরাঁর উদ্বোধনীতে যাওয়ার কথা ছিল নায়িকা অপু বিশ্বাসের। খবর পেয়ে জেহাদীরা আপত্তি তুললো। থানা-পুলিশে গড়াল বিষয়টি। পুলিশী হস্তক্ষেপে অপু বিশ্বাসের আর যাওয়া হলো না।
জুলাই-আগস্টের কড়া সমর্থক ছিলেন পরীমণি, মেহজাবিন। দৌড়ানি খেয়ে এখন তারা কি বলবেন? অবশ্য বলেছেন পরীমনি। 'কিছু হলেই জেলে পাঠাবে। তা হলে দেশের মানুষ কথা বলবে না? বোবা হয়ে থাকবে?'
নির্মাতা আশফাক নিপুণ পরীমণির প্রসঙ্গ টেনে বলছেন, মব থামান। জনাব সরকার, কাজের সরকার হোন। মব ঠ্যাকান।
শিল্পী রওনক জাহান চমক বলেছেন, দেশটা কারো বাপের না।
কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বলেছেন, এখন আর জনে জনে শিকল পরাতে হবে না। প্রতিটি নারীর পায়ে অদৃশ্য শিকল পরানো হয়ে গিয়েছে।
শুধু কি স্টোর উদ্বোধন? নারী ফুটবলের উপর এসেছে আঘাত। জেহাদীদের তান্ডব। দিনাজপুর ও জয়পরহাটে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যার নিন্দা করেছে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ঢাকার চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে কওমী উদ্যোক্তা সম্মেলনে নারী সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি অবশ্য নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বিষয়টি জানতেন না।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো 'হিজাব র্যালি'।
ভয়াবহ খবর হলো, এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, একুশের মেলায় প্রকাশের আগে বাংলা একাডেমি বা পুলিশকে দিয়ে বই পড়িয়ে নেওয়া উচিত! তার মানে সেন্সর? লাল স্বাধীনতা?
অবশ্য সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তাফা সারোয়ার ফারুকী বলেছেন, এটা অবিশ্বাস্য, হাস্যকর। পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মতামত। সেন্সরের কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই।
ভয়াবহ খবর আরও আছে। লাল স্বাধীনতার বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে। আগের মতো নাটক-সিনেমা নেই। দেখলাম, এক টিভি সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট শিল্পী রওনক হাসান বলছেন, নাটকের ৮০ ভাগ কাজ এখন বন্ধ। শিল্পীরা বেকার। নতুন লগ্নি নেই।
বাংলাদেশের শিল্পীরা ব্যাপকহারে দেশান্তরী হচ্ছেন। সামর্থ যাদের আছে, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে পাড়ি দিচ্ছেন। নিউইয়র্কে এখন বিপুল বাংলাদেশী শিল্পীর বসবাস।
প্রশ্ন হলো, দেশে এ সব কি হচ্ছে?
ভাস্কর্য ভাঙ্গা দিয়ে শুরু। এর পর মাজার ভাঙ্গা, হামলা। নারী ফুটবলে বাধা। বাধা নারী শিল্পীদের দিয়ে স্টোর উদ্বোধন। কথায় কথায় মব জাস্টিসের হুমকি। ক'দিন পর হয়তো শোনা যাবে, বোরখা ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়া নিষেধ! এক সময় শোনা যেত, জেহাদীরা বলতেন, নারী নেতৃত্ব হারাম! আগামীতে হয়তো তারাই বলবেন, নারী শিক্ষা হারাম! দোয়া করি, তা যেন আমাদের শুনতে না হয়।
অন্য এক প্রসঙ্গ দিয়ে লেখাটি শেষ করি। বর্তমানে ক্ষমতার কেন্দ্রে আছে জামাত। আর জামাতের কোলে বসে প্রেস সচিব মহোদয় বলছেন, রাজনীতি করতে চাইলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে! এতো দেখি, 'ছোট মুখে বড় কথা'। 'লাড়কার চেয়ে লাড়কার গু ভারী' (কি দুর্গন্ধ!)। তাকে জিজ্ঞেস করি, নিষিদ্ধ জামাত সারা দেশ চষে রাজনীতি করছে, প্রতিদিনই আছে তাদের মিটিং-মিছিল, একাত্তরের অপরাধের জন্য তারা কি কখনো ক্ষমা প্রার্থনা করেছে? উত্তর, একবারও না। প্রেস সচিব মহোদয়, আমাদের এতো বোকা ভাবেন কেন?