ব্রিস্টলের মানুষ এত রোমান্টিক কেন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৩

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রিস্টলের ৪০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তাই যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে রোমান্টিক শহর হিসেবে ব্রিস্টলের নাম উঠে আসাটা খুব একটা অবাক করার মতো নয়। পশ্চিম ইংল্যান্ডের এই শহরের মানুষ সাধারণত অপরিচিতদেরও স্থানীয় উপভাষায় ভালোবাসাপূর্ণ সম্ভাষণে স্বাগত জানায়।
সম্প্রতি অনলাইন গ্রিটিংস কার্ড কোম্পানি ‘মুনপিং’ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিস্টলের মানুষ সপ্তাহে গড়ে ৯ বার ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বাক্যটি উচ্চারণ করে। ২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর পরিচালিত এই জরিপে ম্যানচেস্টার দ্বিতীয় এবং নিউক্যাসল, বার্মিংহাম ও লন্ডন যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
জরিপের সত্যতা যাচাই করতে ব্রিস্টলের রাস্তায় গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এক প্রতিবেদক। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী—শহরের হারবারসাইড ব্রিজে যখন ৭৯ বছর বয়সী মাইক হজেস এবং তাঁর ৭৫ বছর বয়সী স্ত্রী এলসিকে হাত ধরে হাঁটতে দেখা গেল, তখনই ভালোবাসার বিষয়টি কিছুটা অনুধাবন করা সম্ভব হলো। আশপাশের রেলিংয়ে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে স্থানীয়দের রেখে যাওয়া তালাগুলোও যেন সেই ভালোবাসার সাক্ষী।
‘ব্রিস্টলের মানুষ কি আসলেই সবচেয়ে রোমান্টিক?’ —এই প্রশ্নের উত্তরে মাইক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘আমরা ৫২ বছর ধরে সুখী দাম্পত্য কাটিয়েছি!’ তবে সঙ্গে সঙ্গেই এলসি চোখ ছোট করে বললেন, ‘আসলে ৫৬ বছর!’
মাইক হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি মাঝে মাঝে ওকে বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ এলসি সঙ্গে সঙ্গে যোগ করলেন, ‘শুধু তখনই বলে, যখন ওর কিছুর প্রয়োজন পড়ে!’
ব্রিস্টলের মানুষের ভালোবাসার প্রকাশের আরও প্রমাণ মেলে ৬৬ বছরের ডায়ান মিচাম এবং ৬৫ বছরের জুলি হলকম্ব নামে দুই বোনের কাছ থেকেও। কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। দুজন একসঙ্গেই বললেন, ‘আমরা সব সময় বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি—এই কথাটা বলা খুব জরুরি।’
ডায়ান যোগ করলেন, ‘জীবন খুব ছোট। আমরা দুজনেই বিধবা। আমাদের স্বামীরা চলে গেছেন, তাই আমরা প্রতিদিন একে অপরের সঙ্গে কথা বলি, একসঙ্গে ঘুরতে যাই, ছুটির দিন কাটাই।’
শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কিং স্ট্রিটে গেলে আরও রোমাঞ্চের দেখা মিলল। একটি ভাসমান পানশালার ব্যবস্থাপক ৩৪ বছর বয়সী টিম হ্যাচার। তিনি বললেন, ‘আমাদের এখানে প্রচুর মানুষ প্রথম ডেটে আসে। প্রতি সপ্তাহেই দেখি, কেউ কেউ তিন-চারটা ডেটও করছে!’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেকে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় যে, আমাদের বার থেকে লেবুর টুকরো ছুড়ে থামাতে হয়!’
‘ওল্ড ব্রিস্টোলিয়ান’ নামে একটি বিশেষ পানীয় প্রেমিক-প্রেমিকাদের সম্পর্ক এগিয়ে দিতে সহায়তা করে কিনা, জানতে চাইলে হ্যাচার হেসে বলেন, ‘এই পানীয় যথেষ্ট শক্তিশালী!’
১৯ বছর বয়সী ফিন লেনাঘান এবং মেগ প্যান্ট্রি জন্মগতভাবেই ব্রিস্টলের বাসিন্দা এবং বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলে পড়ছেন। তাঁরা জানালেন, এই শহরের সুন্দর লোকেশনগুলোই প্রেমের পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে। সানডে টাইমসের প্রতিবেদক তাই গিয়েছিলেন ব্রিস্টলের অন্যতম সুন্দর স্থান ক্লিফটন সাসপেনশন ব্রিজে। সেখানকার বেঞ্চগুলোতে দেখা গেল প্রেমিক-প্রেমিকারা বসে আছেন। কেউ লাঞ্চ ডেটে, কেউ বা হাতে হাত রেখে হাঁটছেন।
২২ বছর বয়সী ফিন থংলু, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের তৃতীয় বর্ষের ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘শহরের অনেক রোমান্টিক স্পট আছে, যেগুলো এখন টিকটকে জনপ্রিয় হয়ে গেছে!’
সঙ্গে থাকা ফিনের প্রেমিক ২৪ বছর বয়সী লুইস থর্ন বলেন, ‘আমাদের ভ্যালেন্টাইনস ডেটের স্থানটাও আমরা টিকটক থেকে পেয়েছি!’
একটি শহরের প্রেমিক-প্রেমিকাদের চেয়েও তাঁদের রোমান্টিকতার মাত্রা যদি কেউ ভালো বোঝেন, তবে তিনি নিঃসন্দেহে ফুল বিক্রেতা। ব্রিস্টলে ফুলের ব্যবসা করেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ৩৪ বছরের ফরেস্ট কেসলার। তিনি জানালেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগের দিন তাঁকে টনকে টন লাল গোলাপ কিনতে হয়!
তিনি আরও জানান, ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে হয়। কারণ অনেক পুরুষ সেদিন হঠাৎ এসে বলে—‘ডিনারে যাচ্ছি, কিন্তু ফুল আনতে ভুলে গেছি!’
ভালোবাসার এই বার্তাগুলোই বলে দেয়—ব্রিস্টল শহরে টইটুম্বুর রোমান্টিকতার কথা।