গ্রেপ্তার এড়িয়ে কোথায় আছেন আলোচিত আদম তমিজী হক

বিশেষ প্রতিবেদক
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৮

ফেসবুক লাইভে নিজের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পুড়িয়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া হক গ্রুপের কর্ণধার আদম তমিজী হকের বিলাসবহুল জীবন ও আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসছে আলোচনায়।
আদম তমিজীর বাড়িতে থাকা একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি অসুস্থ, চিকিৎসা চলছে। তবে কোথায় কোন চিকিৎসক তাকে কী ধরনের চিকিৎসা দিচ্ছেন- সে বিষয়ে তারা কিছু বলতে চাননি।
তমিজী হকের দুই স্ত্রী লিজা আদম হক ও নুসরাত হক ও পাঁচ সন্তান রয়েছে তার সঙ্গে। তমিজীর মা ইয়াসমিন হক ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে এসেছিলেন গত ২৬ নভেম্বর। আবার লন্ডন ফিরে গেছেন। তমিজীর বাসায় দারোয়ান, গৃহপরিচারিকা, বাড়ির ডিজিএমসহ ৪৪ জন কর্মচারী রয়েছে।
হক গ্রুপের টঙ্গি ফ্যাক্টরির ডিজিএম ও বাসার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, তমিজী সাহেব অসুস্থ। দুই স্ত্রী তার দেখভাল করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার না করে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছে। তিনি সুস্থ হলেই আদালতে যাবেন।
বিলাসবহুল জীবন
বিলাসী ও সৌখিনতার মোড়কে চাকচিক্যময় জীবন তমিজী হকের। তার বাসা ঘুরে দেখা যায়- তিনটি নিশান বক্স গাড়ি। বাড়ির স্টাফদের জন্য ১২টি মোটরসাইকেল, একটি হায়েস অত্যাধুনিক আরামদায়ক বাস, একটি হোমকারা ভ্যান (যার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা) ও পাজেরো নিশান গাড়ি।
তিন তলার ডুপ্লেক্স বাড়ির প্রতিটি কক্ষে রয়েছে হাই সিকিউরিটি এক্সেস। নিচে দুটি প্রাইভেট পুলসহ কারজোয়া, হিটবাথসহ অত্যাধুনিক সুসজ্জিত জিমনেশিয়াম। বাড়ির নিচের ফলকে রয়েছে রুপায় বাঁধানো দরজা, সিঁড়ি।
আদম তমিজীর বাবা ব্যারিস্টার তমিজী হক ছিলেন হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিস্কুট এবং ব্যাটারি শিল্পে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে হক গ্রুপ। বাবার মৃত্যুর পর হক গ্রুপের নেতৃত্বে আসেন আদম। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। প্রভাব খাটিয়ে একাই মৃত বাবার সম্পত্তিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন বলে অভিযোগ করেন তার বোন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আদম তমিজীও ছিলেন তাদের একজন।
২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের ঢাকা উত্তর সিটি কমিটি অনুমোদন পেলে সেখানে উপদেষ্টা হিসেবে নাম আসে আদম তমিজীর।
২০২০ সালে আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তর সিটি শাখা কমিটিতে জায়গা পান তিনি। রাজনৈতিক সুবিধা না পাওয়ায় আদম তমিজী একাধিকবার ফেসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পোড়ান এবং নারী নেতৃত্ব, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তর শাখা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে আদম তমিজীর এসব কর্মকাণ্ডের কারণ খুঁজতে তদন্তেরও ঘোষণা দেয়।
আদম তমিজীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন- এমন খবরে তার বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। এমনকি নিজের স্ত্রীকে হত্যার হুমকিও দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তমিজীর বাড়ির এক সদস্য জানান, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন। তিনি এখন চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা যদি পরামর্শ দেন ও অন্যান্য জটিলতা কমে আসে তাহলে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশেও নেওয়া হতে পারে।