জার্মানি দিয়ে বিদেশ সফর শুরু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫১

জার্মানিতে অনুষ্ঠিতব্য মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের প্রথম বিদেশ সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। গত ৬০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স অনুষ্ঠান হচ্ছে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও পৃথিবীর বিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ নেতারা সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ নানান নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন।
২০১৮ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরেও শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স দিয়ে তাঁর বিদেশ সফর শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময়ের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে সবসময় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করে থাকে। ফলে কনফারেন্স ডিপ্লোমেসির সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা যায়।’
এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং এর ফলে অনেকের সঙ্গে, বিশেষ করে ইউরোপের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে তিনি জানান।
২০২৩ সালে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ফ্রান্স ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা, ২০২৬ এর পরে বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য বিদেশিদের সঙ্গে সুসম্পর্কসহ নানান কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করার কোনও বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘একটি দেশে যত উন্নয়ন হয়, তার বিদেশ নির্ভরতা তত বেশি বাড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাত্রা অনেক বেশি। কারণ ওই সব দেশের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয় এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে কোন দেশের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাখা হবে।’
ইউরোপ এগিয়ে এসেছে
সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিক অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনামূলক অবস্থান গ্রহণ করে। এর বিপরীতে ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়াসহ আরও অনেক দেশের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।
এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘সম্পর্ক তৈরি করতে হলে দুই পক্ষেরই আগ্রহ থাকতে হবে এবং স্বার্থের জায়গা থাকতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থানের মতভিন্নতা আছে। রাজনীতি ও উন্নয়নকে এক লেন্সে দেখে না ইইউ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দুটিকে একই লেন্সে দেখে থাকে। ফলে রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় না হলে, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করবে বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইইউ। সরকার অবশ্যই এখন ইউরোপের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাইবে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে।’
কোনও দেশকে খাটো করে দেখবে না বাংলাদেশ। তবে যারা বেশি আগ্রহী, তাদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে চাইবে এবং সম্পর্কের মাত্রা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায় বলেও তিনি জানান।