মুসলিমরা যেভাবে গড়ে তুললেন জোহরান মামদানিকে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০৪

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরে বড় প্রভাব ফেলেছিল ২০০১ সালের নাইন–ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলা। ছড়িয়েছিল ইসলামভীতি। সেই ইসলামভীতির আবহে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন নিউইয়র্কের মুসলিমরা। তাঁদের এই সাফল্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিফলন নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। নাইন–ইলেভেনের ঘটনার পর আরব ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রতিশোধমূলক হামলার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল নগরজুড়ে—এমনকি পুরো যুক্তরাষ্ট্রেও। আজকের নির্মম ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসের অভিযানের পূর্বাভাস যেন সেই সময়ই পাওয়া গিয়েছিল। অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে শত শত মুসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁদের অনেকে অমানবিক অবস্থায় আটক ছিলেন। মুসলিমদের নাগরিক অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছিল। ২৪ বছর পর নিউইয়র্কের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এই নগর এখন সেখানকার ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত করার জন্য প্রস্তুত। সেখানেই ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন জিতে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এত গভীর এই পরিবর্তনের পেছনে কী কাজ করেছে? প্রশস্ত হাসির অধিকারী জোহরানের প্রায় অপ্রতিরোধ্য উত্থান ব্যাখ্যা করা যায় তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে। মার্কিন রাজনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজসহ অনেকে তাঁকে বলেছেন, ‘এক প্রজন্মে একবার পাওয়া যায় এমন নেতা।’ মামদানির সাফল্যের গল্প কেবল ব্যক্তিগত নয়—এটি আরও বড় এক ইতিহাসের অংশ, যেখানে ৯/১১–এর পর কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া তরুণ মুসলিম নিউইয়র্কবাসী সংগঠিত হয়ে নতুনভাবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। ইসলামভীতির উত্থানের বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজন থেকেই জন্ম নেয় এই তরুণ মুসলিমদের রাজনৈতিক জাগরণ। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা শহরে রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলেছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। তাঁরা এমন এক নতুন ধারা গড়ে তুলেছেন, যা নতুন পরিচয়কে গ্রহণ করে, সীমাবদ্ধতাকেও অতিক্রম করে। এই আন্দোলন নীরবে ও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে উঠেছে বহু বছর ধরে। জোহরান মামদানি আজ সেই আন্দোলনের সবচেয়ে সফল ও পরিপূর্ণ প্রতিফলন।
নিউইয়র্কের মুসলিমরা যেমন সংগঠিত হচ্ছেন, তেমনি তাঁদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে এখন কোনো প্রার্থীই মুসলিম ভোটারদের উপেক্ষা করে জেতার আশা করতে পারেন না। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মুসলিম বসবাস করেন (ধর্মভিত্তিক কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই), যা শহরের ইহুদি জনগোষ্ঠীর প্রায় সমান। আমেরিকান–ইসলামিক রিলেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কে ১০ লাখ মুসলিমের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ নিবন্ধিত ভোটার। যদিও ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনে মাত্র ১২ শতাংশ মুসলিম ভোট দিয়েছিলেন। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। নিউইয়র্ক মুসলিম ডেমোক্রেটিক ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মেয়র পদে দলীয় প্রাইমারিতে মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের উপস্থিতি ২০২১ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো দাবি করেছিলেন, মুসলিম সম্প্রদায় সমাজতান্ত্রিক নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমরা এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে মৌলিক নীতিগত প্রশ্নে বামধারার ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। নিউইয়র্ক মুসলিম ডেমোক্রেটিক ক্লাবের সভাপতি সামান ওয়াকাদ বলেন, ‘জোহরানকে খুবই ব্যতিক্রমধর্মী প্রার্থী হিসেবে দেখছেন মানুষ এবং তিনি তা–ই। কিন্তু এই নির্বাচনে তাঁর গুরুত্ব গড়ে উঠেছে গত দুই দশকে। বিশেষ করে ৯/১১–এর পর মুসলিমদের সংগঠিত রাজনৈতিক কাজের ভিত্তির ওপর।’ ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুসলিমদের ওপর নজরদারি শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে আলোচিত হয়েছিলেন। তাঁর নথিতে এ ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। ওই সময় নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে মুসলিমদের রাজনীতিতে প্রভাব ছিল খুব কম। ওই সময় সিটি কাউন্সিলে রবার্ট জ্যাকসন নামের একজন নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে সিটিতে জয়ী হওয়া জ্যাকসন পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে আগ্রহী তরুণ মুসলিমদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত হন। ২০১৮ সালে জ্যাকসন প্রথম মুসলিম হিসেবে রাজ্যের সিনেটে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের মেয়র নির্বাচনের সময় মুসলিম নিউইয়র্কবাসী কাঠামোগত সমাধান খুঁজতে শুরু করেন। নিউইয়র্ক মুসলিম ডেমোক্রেটিক ক্লাব সেই বছর গঠিত হয়। জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে উত্থান শুরু হয় নিউইয়র্ক মুসলিম ডেমোক্রেটিক ক্লাব থেকে। ক্লাবের সহপ্রতিষ্ঠাতা আলী নাজমি একজন আইনজীবী। ২০১৫ সালে তিনি সিটি কাউন্সিল পদে প্রার্থী হন। নাজমির শৈশবের বন্ধু, র্যাপার হিমস তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। মামদানিকে কুইন্সে নাজমির প্রচারণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন হিমস। ২০১৭ সালে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান লুথারান পাস্তর ও ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য খাদের এল-ইয়াতিম সিটি কাউন্সিলে একটি আসনের জন্য প্রার্থী হন। মামদানি ছিলেন তাঁর প্রচার দলের পরিচালক। ২০১৮ সালে মামদানির নেতৃত্বে বামপন্থী রাজনৈতিক সাংবাদিক রস বার্কান স্টেট সিনেটে প্রার্থী হন। নাজমি, এল-ইয়াতিম এবং বার্কান সবাই তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান। নাজমি বলেছেন, ‘জোহরানের উত্থান হলো অনেক মানুষের পরাজয়ের ফলাফল।’ প্রচারের অর্থ সংগ্রহের পরিসংখ্যানও দেখা যায়, মামদানির ‘সাশ্রয়ী মূল্যের নিউইয়র্ক’ বার্তা মুসলিম সম্প্রদায়ের বাইরে কতটা প্রভাব ফেলছে। মার্কিন রাজনীতির বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওপেন সিক্রেটসের তথ্য অনুযায়ী, মামদানির প্রচার শিবির এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ দাতা ২৫০ ডলারের কম অনুদান দিয়েছেন। গড় অনুদান মাত্র ৯৮ ডলার। তুলনামূলকভাবে, মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর প্রচারে গড় অনুদান ৬১৫ ডলার। তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার তুলতে পেরেছেন। মামদানির জন্য বড় শক্তি হলো তাঁর রাজনৈতিক ‘অ্যাকশন কমিটি’ বা ৮৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দল। এই স্বেচ্ছাসেবীরা ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়ছেন এবং সাশ্রয়ী খরচে নিউইয়র্কে টিকে থাকার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।
মামদানিকে আক্রমণ : মামদানিকে লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ বাড়ছে। তাঁর মুসলিম ও এশীয় পরিচয়কে নিয়ে আক্রমণ করছেন কুমো। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। মামদানিকে আক্রমণ করে এ ধরনের ভিডিও পোস্টকে ভালোভাবে নেননি অনেকেই। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র বিল ডে ব্লাজিও বলেছেন, কুমো মামদানিকে লক্ষ্য করে যে ভিডিও করেছেন, তা বর্ণবাদ। এ ধরনের ভিডিও চালাতে দেওয়া সরকারের উচিত নয়। নিউইয়র্ক নগরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪ নভেম্বর। নির্বাচনের আগে মামদানিকে লক্ষ্য করে যে ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে, তাতে অনেকেই বলছেন, কুমোর নির্বাচনী যোগ্যতা বাতিল করা উচিত।
জোহরানকে ঘায়েল করতে ‘মুসলিম’ পরিচয় সামনে আনছেন বিরোধীরা, কীভাবে জবাব দিচ্ছেন তিনি : নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্রেটিক দলের মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর প্রতিপক্ষের ‘বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন আক্রমণ’-এর জবাব দিতে গিয়ে এক আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচনে আগাম ভোট শুরুর মাত্র এক দিন আগে তিনি এই বক্তব্য দিলেন। এই নির্বাচনে তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। নগরের ব্রঙ্কস এলাকার একটি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে জোহরান বিরোধীদের সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, তাঁরা ‘ঘৃণাকে সামনে নিয়ে আসছেন’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের এই ইসলামভীতি শুধু মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই আঘাত করছে না। বরং নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ মুসলিমের আবেগেও আঘাত করছে। ৪ নভেম্বর মেয়র নির্বাচনের দুই সপ্তাহের কম সময় আগে দেওয়া বক্তৃতায় জোহরান বলেন, নিউইয়র্কে একজন মুসলিমের জীবন মানেই অসম্মান বা অমর্যাদা মেনে নেওয়া। তবে এই অসম্মান কেবল আমাদের একার নয়। নিউইয়র্কের বহু মানুষই এর শিকার। আমরা এই অসম্মানকে কতটা সহ্য করে নিই, সেটিই আসল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। বর্তমানে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান জানান, তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের মূল বার্তা অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর প্রতিপক্ষরা দেখিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলামভীতি এখন তাঁদের মধ্যে একমত হওয়ার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে।’ নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক রাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে জড়িয়ে একটি প্রশ্ন করার একদিন পর জোহরান এই বক্তব্য দিলেন। রেডিও সঞ্চালক সিড রোজেনবার্গ অনুষ্ঠানে কুমোকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আরেকটি ৯/১১ হামলা হলে জোহরান ‘উল্লাস’ করবেন। তাঁর কথা শুনে কুমো হেসে ওঠেন
ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও জুনে দলীয় প্রাইমারিতে জোহরানের কাছে হেরে যাওয়া কুমো রেডিওর সঞ্চালক রোজেনবার্গের কথায় সায় দিয়ে বলেন, ‘সেটিও আরেকটি সমস্যা।’ মুসলিমদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সিএআইআর অ্যাকশন’–এর নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলকারা রেডিও অনুষ্ঠানে কুমোর এই আচরণকে ‘ঘৃণ্য, বিপজ্জনক ও অযোগ্য’ বলে আখ্যা দেন। এলকারা বলেন, ‘একজন বর্ণবাদী রেডিও সঞ্চালকের কথায় সম্মতি দিয়ে কুমো নৈতিকতার সীমা পেরিয়ে গেছেন। ওই সঞ্চালক ইঙ্গিত করেছেন, একজন মুসলিম নির্বাচিত কর্মকর্তা আরেকটি ৯/১১-এ “উল্লাস” করবেন।’ এলকারা আরও যোগ করেন, ‘এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে এমন বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে কুমো তাঁর নেতৃত্বের আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি এমন একজন নেতা যিনি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেয়ে বরং ভয় ছড়াতেই বেশি আগ্রহী।’ জোহরান আরও বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া তাঁকে বিতর্কের মঞ্চে “কলঙ্কিত” করেছেন। স্লিওয়া দাবি করেছিলেন, আমি বিশ্বব্যাপী জিহাদকে সমর্থন করি। এ ছাড়া কিছু সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছে—আমি একজন সন্ত্রাসী, অথবা তারা আমার খাওয়ার ভঙ্গি নিয়ে উপহাস করেছে।’ জোহরান নিজের পুরোনো কষ্টের স্মৃতিও তুলে ধরেন—তাঁর এক খালা যিনি ৯/১১-এর পর হিজাব পরে আর নিরাপদ বোধ করতেন না বলে সাবওয়েতে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর এক কর্মীর গ্যারেজে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি স্প্রে করে লেখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচনে জিততে চাইলে যেন তিনি মানুষকে ‘বলতে না যান’ যে তিনি মুসলিম।
শীর্ষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন : জোহরান মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিজের কাছ থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সমর্থন পেয়েছেন। জেফ্রিজ নিউইয়র্কের অষ্টম কংগ্রেশনাল আসন (ব্রুকলিনের ইস্ট ফ্ল্যাটবুশ, কনি আইল্যান্ড এবং ব্রাউনসভিল এলাকা অন্তর্ভুক্ত) থেকে নির্বাচিত সদস্য। জোহরান নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল, কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেজ এবং স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের মতো শীর্ষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পেয়েছেন, তবুও স্পষ্টভাষী ফিলিস্তিনপন্থী এই প্রার্থী সিনেটর চাক শুমারের মতো নিউইয়র্ক শীর্ষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পাননি। ডেমোক্রেটিক দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার দ্বিধা সত্ত্বেও গত জুনে অনুষ্ঠিত দলের প্রাথমিক বাছাইয়ে জোহরান বিপুল ভোটে জয়ী হন। নিউইয়র্ক নগরের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস দুর্নীতির অভিযোগের কারণে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পরে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। প্রথমে কাউকে সমর্থন না দিলেও চলতি সপ্তাহে আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী কুমোর প্রতি সমর্থন জানান। তবে ভোটের ব্যালটে তাঁর নাম থাকবে। এএআরপি ও গোথা পোলিং অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, জোহরান ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে জোহরানের পেছনে আছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী কুমো এবং ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে রিপাবলিকান স্লিওয়া। অন্যদিকে ৮ শতাংশ ৪ শতাংশ ভোটার হয় সিদ্ধান্ত নেননি বা অন্য প্রার্থীকে বেছে নিতে চান বলে জানিয়েছেন। একই জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারের কাছে জীবনযাত্রার খরচ ছিল প্রধান উদ্বেগের বিষয়। পাশাপাশি জননিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিয়েও ভোটারদের চিন্তা রয়েছে।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন : বামপন্থীদের সমর্থন পেলেন জোহরান মামদানি : নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে গত রোববার ভোটারদের এক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বামপন্থী নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত জোহরান মামদানি এখন নিউইয়র্ক শহরের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছানোর দোরগোড়ায়। রোববার কুইন্সের একটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ মামদানিকে সমর্থন দেন। মামদানি একসময় ছিলেন একেবারে প্রান্তিক প্রার্থী কিন্তু এখন মেয়র পদের প্রতিযোগিতার শীর্ষে উঠে এসেছেন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থী ধারার অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন। নিউইয়র্কে মেয়র পদে আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পরদিন কুইন্সের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। ৮৫ লাখ জনসংখ্যার শহরটিতে মূল ভোট হবে ৪ নভেম্বর। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেবেন আগামী বছরের শুরুতে।
ওকাসিও-কর্টেজ বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জোরালো বার্তা দেব যে তাঁর কর্তৃত্ববাদ এখানে চলবে না।’ তাঁর বক্তব্যে সমর্থকেরা ‘এওসি, এওসি’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন। ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘মঙ্গলবার এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে, সারা বিশ্বের মানুষ তা নজরে রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো স্বাভাবিক সময় নয়। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট আছেন, যিনি শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীদের এক ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড় দিয়েছেন।’ বার্নি স্যান্ডার্স আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনের দিকেও গভীরভাবে নজর রাখছেন। আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজকে নিয়ে মামদানি বলেন, তিনি সাধারণ পরিশ্রমী মানুষের পক্ষে আছেন। বার্নি স্যান্ডার্সকে নিয়ে মামদানি বলেন, ‘সিনেটর (স্যান্ডার্স) দীর্ঘ সময় একা দাঁড়িয়ে সাহস দেখিয়েছেন। আমি আজ ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রের ভাষায় কথা বলতে পারছি, কারণ তিনিই প্রথম সেই ভাষায় কথা বলেছিলেন।’ ভিক্টরি ইনসাইটসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, মামদানি পক্ষে ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়া কুমোর সমর্থন ২৯ শতাংশ। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ১৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।