ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দুই বছর পূর্তি আজ। এই দুই বছরে কোনো দেশই জয়লাভ করতে পারেনি, তবে সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্যমূল্যের দাম বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে বিশ্বের সাধারণ জনগনকে। লাভবান হচ্ছে কেবল কিছু দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর এতো নিষেধাজ্ঞা এসেছে যে বিশ্বে আর কোনো দেশ এমন পরিস্থিতির মুখে অতীতে পড়েনি। ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম কোনো যুদ্ধ এতো দীর্ঘ হচ্ছে।
গতকালই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে পারেনি। যেসব বিশেষজ্ঞ গত বছরও ২০২৩ সালের শেষ দিকে যুদ্ধ বন্ধের আশা করেছিলেন তারাও এখন এর সমাপ্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা একদিনে ইউক্রেনের সামরিক দুর্বলতা ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়াকেই দায়ী করছেন।
বর্তমান অবস্থা: যুদ্ধের আগে ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা দোনেত্স্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। জবাবে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বলে জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ভাষণ দেন পুতিন এবং ঘোষণা করেন ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর। ঘোষণার কয়েক মিনিট পর কিয়েভে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
বিশ্ববাসী এই হামলাকে আকস্মিক মনে করলেও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পরই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিয়ে রাশিয়া সীমান্তে ঘাঁটি গড়ার পরিকল্পনা করছিল বলে হামলার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। মার্কিন গোয়েন্দারাই ধারণা দিয়েছিলেন যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনে জয়লাভ করবে। কিন্তু রাশিয়া এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে ইউক্রেনের ২০ শতাংশের বেশি ভূমি রাশিয়ার দখলে গেছে। ইউক্রেন সেইসব ভূখন্ড উদ্ধার করতে পারেনি। বরং যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা কমে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছে ইউক্রেন। আর এ সুযোগের সমপ্রতি বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়া। যদিও ইউক্রেন বাহিনী পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের রুশ সীমান্তবর্তী শহর আভদিভকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নীেয়ার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। ২০২৩ সালের মে মাসে বাখমুত শহর দখল করার পর থেকে রাশিয়ার আভদিভকা দখলে নেওয়াকে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষক কমিশনের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধে ৩০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৫৮২ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার আহত হয়েছেন। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। আবার গত ডিসেম্বরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ৩ লাখ ১৫ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। আবার ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের ২৫ হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে দুই দেশের এসব হতাহতের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়া
গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিরা রাশিয়ায় কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া অ্যালেক্সি নাভালনিকে বন্দী করা এবং দেশটির যুদ্ধ পরিচালনায় যুক্ত বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন। এর বাইরে রাশিয়ার প্রায় এক শ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর পাল্টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের একদল কর্মকর্তার ওপর রাশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এসব নিষেধাজ্ঞা বিদেশে আগ্রাসন এবং দেশের ভেতরে নিপীড়ন চালানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কঠোর মূল্য দেওয়াটা নিশ্চিত করবে। বাইডেন বলেছেন, ‘দুই বছর আগে তিনি (পুতিন) ইউক্রেনকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। পুতিনকে যদি তার (নাভালনি) মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য মূল্য দিতে না হয়, তাহলে তিনি তা চালিয়ে যাবেন।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর ১৬ হাজার ৫শ’র বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা। মূলত রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক ৩৫ হাজার কোটি ডলার জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার ব্যাংকের ৭৯ শতাংশ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে ততোটা বিপর্যস্ত করতে পারেনি যতোটা আশা করা হয়েছিল। বিশেষ করে তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কাজে আসেনি। ভিন্ন পথে রাশিয়া পশ্চিমা দেশেও তেল রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল নিচ্ছে। আইএমএফ জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধ্বস আশানুরূপ হয়নি। তবে এবার জিডিপি দুই শতাংশের কিছু বেশি হতে পারে। ২০২২ সালের পর প্রথম বছরেই রাশিয়ার অর্থনীতি দুই দশমিক এক শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে আইএমএফ জানিয়েছে। যদিও মার্কিন অর্থ বিভাগ মনে করে, রাশিয়ার অর্থনীতি পাঁচ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
পশ্চিমা দেশে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপে ইউক্রেন
ইউক্রেনকে টাউরুস ক্রুজ মিসাইল দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের আনা প্রস্তাব পার্লামেন্টে খারিজ হয়ে গেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর শলত্স এই ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভকে দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি মনে করেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র দিলে যুদ্ধের তীব্রতা আরো বাড়বে। বিরোধী সিডিইউ অবশ্য শলেসর যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। তাদের মতে, পুটিন যখন চাইবেন, তখনই যুদ্ধের তীব্রতা বাড়বে। তাদের মতে, এই দূরপাল্লার অস্ত্র পেলে ইউক্রেনের সুবিধা হতো। এর আগে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ৬ হাজার কোটি ডলারের একটি সামরিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদনের চেষ্টা করলেও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার মিত্র দেশ তুরস্ক এবং হাঙ্গেরির কারণে রাশিয়ার ওপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে এই আঞ্চলিক জোট।
বর্তমানে গোলাবারুদের অভাবে সামরিক অভিযান কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা আটকে যাওয়ার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেল ওলেকসান্দ্র তারনাভস্কি। গত মাসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে জেনারেল তারনাভস্কি জানান, সামরিক বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট গোলাবারুদের অভাবে ভুগছে এবং শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান না হলে অদূর ভবিষ্যতে কিয়েভের সামনে ‘বিরাট বিপদ’ আসবে। তারনাভস্কি বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে গোলাবারুদের যে মজুত রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেনে ১০ লাখ গোলা বা আর্টিলারি শেল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইইউ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউক্রেন পেয়েছে ৪ লাখেরও কম শেল।
ভুগছে বিশ্ববাসী
ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে ট্যুর্ক বলেছেন, এই যুদ্ধের ফল কয়েক দশক ধরে মানুষ ভোগ করবে। তিনি অবিলম্বে রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন। ট্যুর্ক বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পুরোদস্তুর আগ্রাসনের একটা ভয়ংকর মানবিক মূল্য রয়েছে। লাখ লাখ বেসামরিক মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ নিয়ে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্ত করার দাবিও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। .
ট্যুর্ক বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করতে চলেছে। এই যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রচুর মানুষ ও পশুর মৃত্যু হয়েছে। ভয়ংকর ধ্বংসলীলা চলেছে। ইউক্রেনের প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছেন। কয়েকশ হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউক্রেনের মানুষ কয়েক প্রজন্ম ধরে এর ফল ভোগ করবেন।
রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থান ইউরোপীয় দেশগুলোর। ফলে এই দেশগুলো গভীর সংকটে পড়েছে। একদিকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি থেকে সরে এসে বেশি মূল্যে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। তেলও আমদানি করতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব। আবার ইউক্রেনে রাশিয়ায় জয় হলে রুশ সীমান্তের অন্যান্য দেশগুলোও সংকটে পড়বে। ইতিমধ্যে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিয়েল ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এরই মধ্যে ইউক্রেনকে ১০ হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়ত দিয়েছে ইউরোপ। ২০২৭ সালের মধ্যে আরো পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে দিয়েছে দেড় হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা। কিন্তু এসব কতদিন সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতিও সংকটে পড়েছে। সেখানে ইউক্রেনকে সহায়তা না দিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো।
ইউরোপজুড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা নির্দিষ্ট আয়ে সংসার চালাতে পারছে না। পরিবহন ও রেল শ্রমিক, ডাক বিভাগের কর্মচারী, হাসপাতালের নার্স, স্কুলশিক্ষক যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সময় ধর্মঘট করছে। সুপার মার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য রেশনিং করে বিক্রি করতে হচ্ছে। করোনা মহামারীর পর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্য ব্যাপক চাপ ও সংকটের মধ্যে পড়েছে। জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি কাগজে-কলমে ৯-১০ শতাংশ হলেও চাল, আটা, ভোজ্যতেল, ডিম, দুধ, সবজি প্রভৃতি ভোগ্যপণ্যের মূল্য ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে?। বাস, ট্রেন, বিমানবন্দর, হাসপাতাল, কিন্ডারগার্টেন প্রভৃতি স্থানে কর্মরত শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করছে।
গত সেপ্টেম্বরের এক গবেষণা অনুসারে, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির ওপর যুদ্ধের প্রভাব পর্যালোচনা করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো যদি কিয়েভের ওপর হামলা না চালাতো তাহলে ২০২২ সালের চতুর্থ অর্ধে প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক এক শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেশি হতে পারতো। মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক দুই থেকে শূন্য দশমিক চার শতাংশ কম হতো। গবেষণা অনুসারে, যুদ্ধে কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জার্মানি। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ না করতো তাহলে ২০২২ সালের চতুর্থ অর্ধে দেশটির জিডিপি শূন্য দশমিক সাত শতাংশ বেশি এবং মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক চার শতাংশ কম থাকতো।
ব্রিটেনও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির জিডিপি হ্রাস পেয়েছে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। সংঘাত না হলে ফ্রান্সে মূল্যস্ফীতি কম হতো শূন্য দশমিক তিন শতাংশ এবং জিডিপি বেশি হতো শূন্য দশমিক এক শতাংশ। ইতালির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ কম এবং জিডিপি শূন্য দশমিক তিন শতাংশ বেশি হতো। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধ না হলে সুইজারল্যান্ডের জিডিপি শূন্য দশমিক তিন শতাংশ বেশি এবং মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক চার শতাংশ কম হতো। এই যুদ্ধটি আগের যুদ্ধের তুলনায় কাছাকাছি এবং অতীতের তুলনায় শরণার্থী ও অতিরিক্ত সামরিক ব্যয়ের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।