আমেরিকার নির্বাচন

আগামী নির্বাচনে কার পক্ষে যাবে স্বতন্ত্র ভোটাররা!

বিশেষ রিপোর্ট
  ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৫

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের বাইরে রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য স্বতন্ত্র ভোটারই শেষ ভরসা। সুইং স্টেটের যেসব ভোটার কোন দলের তালিকাভুক্ত নয়, তাদের মতিগতির উপরই নির্ভর করছে আগামই নির্বাচন। ডেমোক্র্যাট দলের এখনো একান্ত ভরসা স্বতন্ত্র ভোটারদের উপর। ২০২০ সালে যে অল্প ভোটারদের আনুকূল্য জো বাইডেনকে জয়ের মুখ দেখিয়েছে, এবারেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এমন আশাবাদ ডেমোক্র্যাটদের।
নভেম্বরে ভোটের তারিখ যতই এগিয়ে আসছে,ততই উত্তেজনা বাড়ছে।দলীয় প্রাইমারি এবারে অনেকটাই সংক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ডেমোক্র্যাট দলের পক্ষে পুনর্নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। মার্কিন মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত গরম করে রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মামলা এবং বেপরোয়া বক্তৃতার কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে রয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাট রাজনৈতিক কুশীলবদের কৌশল ভিন্ন। তারা ট্রাম্পের বেপরোয়া অবস্থানের কারণে দেশের কী ক্ষতি হতে পারে এ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং গর্ভপাতের বিরুদ্ধে যেসব বক্তব্য রেখেছেন-এসব বক্তব্যে ক্ষুব্ধ স্বাধীনচেতা দলীয় ভোটারদের পছন্দ নয় বলে মনে করছেন বাইডেনের প্রচারণা শিবিরের লোকজন। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা ছিল এসব স্বতন্ত্র ভোটারদের।  
জো বাইডেনের যোগাযোগ বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা টিজে ডাকলো বলেছেন, আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপজ্জনক দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি সচেতন ভোটারদের কাছে। একজন ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পরিণাম কী হতে পারে এবং আমেরিকার পরিবারগুলো কী পরিস্থিতিত মোকাবেলা করতে হতে পারে, এ নিয়ে আমরা ভোটারদের সতর্ক করে দিচ্ছি।" টিজে ডাকলো আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, বিবেকবান স্বতন্ত্র ভোটাররা ততই নড়েচড়ে উঠবেন এবং শেষপর্যন্ত দেশের স্বার্থেই তারা জো বাইডেনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবেন।
উপদেষ্টা টিজে ডাকলো বলেছেন, সুইং স্টেটের স্বতন্ত্র ভোটার এবং যেসব স্বাধীন ভোটার দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে ভোট দিয়ে থাকেন, সেব্য সুইং ভোটার এখনও নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। তারা নীরবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এবং নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে থাকলেই এসব ভোটারদের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন স্বতন্ত্র ভোটারদের চেয়ে অন্তত ১০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। যদিও এখন সে পরিস্থিতি নেই। গুরুত্বপূর্ণ সব জরিপে দেখা যাচ্ছে স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যেও জো বাইডেন পিছিয়ে পড়েছেন।
গত জানুয়ারি মাসে মেসেঞ্জার। হ্যারিস জরিপে দেখা গেছে স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প অন্তত ১১ পয়েন্টে জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে জনমতে ৪৬ শতাংশ এবং বাইডেনের পক্ষে ৩৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে বলে দেখা গেছে। স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ২০ শতাংশ লোকজন বলেছেন, তারা এখনো মনস্থির করেননি। ২০২০ সালে জো বাইডেন স্বতন্ত্র ভোটারদের কাছে ট্রাম্পের চেয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন জনমতে। ২০১৬ সালে অবশ্য স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে প্রকাশ্য সমান সমান দুই ভাগ দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে স্বতন্ত্রদের ভোট পড়েছিল ৪২ শতাংশ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে পড়েছিল ৪৩ শতাংশ স্বতন্ত্র ভোটারদের ভোট। স্বতন্ত্রদের মধ্যে অল্প ভোটের ব্যবধানের কারণেই সুইং স্টেটগুলোতে হিলারি ক্লিনটন হেরেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে তার পরাজয় ঘটেছিল।
ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে মামলা নিয়ে তেমন কোন রাজনৈতিক হামলা করা হচ্ছে না। ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদরা মনে করছেন, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত মামলা নিয়ে তাদের প্রচারণাকে ট্রাম্প নিজের পক্ষে নেয়ার প্রয়াস চালাবেন। রাজনৈতিক হয়রানির জন্য তাঁকে একের পরও এক মামলা দেয়া হচ্ছে, এ কথা ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার দেয়া ইমিগ্র্যান্ট ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তৃতা। গর্ভপাতসহ নারীদের নিয়ে তার বক্তৃতা এবং কৃষ্ণাঙ্গ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই কঠোর হবেন, এমন ঘোষণাকে প্রচারণার সামনে আনা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হলে ট্রাম্প একজন স্বৈরাচারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠবেন, এমন কথাই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় বলা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারণায় নেমে ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন। গত শুক্রবার আটলান্টার এক প্রচারণা সভায় তিনি ট্রাম্পকে নারী অধিকার বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তিনি নিজে নারীদের সম্মানের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে জিল বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প নানাভাবে আমেরিকার নারীদের অবদমন করার চেষ্টা করে আসছেন। এখন গর্ভপাত নিয়েও তিনি নারীদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।