সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে আমেরিকায় পাড়ি জমান ব্যবসায়ী ইফতেখার

মনজুরুল হক
  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৫

বাংলাদেশে কম্প্রেহেনসিভ মোটর্সের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন ইফতেখার আহমেদ। বাইরের দেশ থেকে লিফট ও ছোট মিনি পিকআপ আমদানি করতেন। বাংলাদেশে ব্যবসায় সফলতাও লাভ করেন। কিন্তু এ সফলতার পরেও তার মনে নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। নিজেদের সন্তানদের নিয়ে অস্থিরতায় ভুগেন তিনি। আর এই অস্থিরতায় তাকে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে বাধ্য করে। বর্তমানে আমেরিকায় একজন সফল ব্যবসায়ী। ক্যাপটর ইউএসএ কোম্পানীর চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার।
সেই সময়ের বাংলাদেশের স্মৃতি নিয়ে ইফতেখার আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালে আমার মা আমার সাথে থাকতো। আমি তখন ধানমন্ডিতে থাকতাম। ধানমন্ডিতে আমি কম্প্রেহেনসিভ মোটরসের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলাম আমি বাইরে থেকে লিফট ইমফোর্ট করতাম। সাথে ছোট ছোট মিনি পিকআপ ইমপোর্ট করতাম। ২০১৩ সালে স্কুলে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যাচ্ছে আমার ছেলে মেয়েরা। তখন হরতাল, মারামারি, রাজনীতিক অস্থিরতা চলছিল দেশে। দেশের বাচ্ছাদের পড়ালেখার অনেক সমস্যা হচ্ছিল। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রতিদিনই পরীক্ষা বাতিল করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তখন আমি চিন্তা করলাম আমার সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়.? আমি টাকা ইনকাম করছি কিন্তু আমার সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিতে পারছি না। আমার টাকা ইনভেস্ট করবো কোথায়, পুরো দেশেরই তো নিরাপত্তা নেই। তখন আমার কাছে মনে হলো আমি আর পারছি না। আমি আমার দেশকে দোষ দিচ্ছি না। আমি নিজেই এখানে এডজাস্ট করতে পারছি না। আমি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছি। বহু দেশে আমি ট্রেনিং নিয়েছি। ঐই সুবাদে অনেক দেশ বিদেশ ঘোরঘুরি হয়েছে। তখন আমি চিন্তা করলাম তাদেরকে নিয়ে আমেরিকা চলে আসার।
বর্তমান আমেরিকার ব্যবসা নিয়ে তিনি বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রে আমার হোম কেয়ারের ব্যবসা রয়েছে। আমার তিনটা অফিস রয়েছে। নিউইয়র্কে, বাফেলোতে এবং নিউ জার্সিতে। ভবিষ্যতে প্যানসেলভেনিয়া, ভার্জিনিয়াতেও অফিস করার চিন্তা করেছি। আমি এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৭৫ জনের মত স্টাফকে বেতন দিচ্ছি। আমি ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের সাথে আমার লাইসেন্স নেয়া আছে। আমার এখানে অনেক বাঙালী কমিউনিটির অনেকেই আছে। যারা ইতিমধ্যে লাভবানও হয়েছে।
দেশের সামাজিক কাজেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছেন আমেরিকার বসবাসকারী বাংলাদেশী ইফতেখার আহমেদ। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী করোনার সময় চরম অসুস্থ হয়ে যায়। সে সুস্থ হওয়ার পর তার মাধ্যমে আমি একটি চ্যারিটি অর্গানাইজেশন করেছি। নাম হাত বাড়িয়ে দাও। এর মাধ্যমে ঢাকার শ্যামলিতে একটি এতিমখানা আছে। এখানে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ এতিম ছেলে আছে। তাদের প্রায় সকল খরচ আমি আমেরিকা থেকে পাঠাই। এছাড়া সিলেটের বন্যার জন্য আমি প্রায় ২৫০ পরিবারকে এক মাসের খাবার দিয়েছি হাত বাড়িয়ে দাও অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে। সামনে এটা নিয়ে আরও বড় কিছু করার চিন্তা আছে আমার বলেও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমান দেশের নানান সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে ক্যাপটর ইউএসএ’র সিইও বলেন, আমার যদি সচেতন না হই, দেশের সকল নাগরিক যদি প্রত্যেকে নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হয় তাহলে পরিবর্তন আনা খুব কঠিন। কে কি করলো, কোন রাজনৈতিক দল কি করলো তা নিয়ে আমাদের সময় নষ্ট হয়ে প্রায় ৮০ ভাগ। দেশে নানা ক্ষেত্রে চলে পাওয়ার গেইম। একজন আরেকজনের উপর ক্ষমতা দেখাতে চায়। যা আসলে দেশটাকে একেবারেই ক্ষতির সম্মুখিন করতেছে। সবকিছু একটা সঠিক নিয়মের মধ্যে আসার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তাহলে সবকিছুই এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের ভালো লাগার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও দেশের মানুষের সফলতা দেখলেই গর্ভে বুকটা ভরে ওঠে। দেশের কোন শিক্ষার্থী ফুল স্কলারশিপ নিয়ে যখন আমেরিকাতে পড়তে আসে তখনে খুব ভালো লাগে। এরপরে খেলাধূলায় বাংলাদেশের জয় সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই।
বর্তমানে  ইমিগ্রিশেন এন্ড বিজনেস কনসালটিং ফার্ম নিয়ে কাজ করছেন ইফতেখার আহমেদ। তিনি বলেন, এখানে আমি বাংলাদেশ কমিউনিটি সদস্যদের কিভাবে একটি বিজনেস এক্সপেনশন করা যায়্ তা নিয়ে হেল্প করি। আমেরিকায় কোন ব্যবসাতে ফান্ড কিভাবে ব্যাংকলোন করতে হয়। এ ধরনের সকল কাজে আমি তাদেরকে হেল্প করি। এছাড়া এখানে কমিউনিটিতে যত বৃদ্ধ মা-বাবা ভাইবোন আছেন তাদের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের টেক কেয়ার করার জন্য নার্সিং এর সেবা সেটা আমি দিয়ে থাকি। আমার কোম্পানীল থ্রোতে দিয়ে থাকি। আর এ কাজের জন্য বাঙালী কমিউনিটিতে সবাই মোটামুটি আমাকে চিনে।
দেশের সিস্টেম অনুযায়ি কাজ করলে হলে অনেক কিছুতে সফলতা আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে অনেককিছুতেই সফলতা আসবে। ধরেন একজন সচিবও জানে যে, একটা প্রজেক্ট কি সিস্টেমে করলে ভালো হবে। কিন্তু সে সেটা করে না। কারন এটার সাথে অনেক কিছু জড়িত। তাই আমার কথা সবাই যদি সিস্টেম অনুযায়ি কাজ করে তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরেন একটা পত্রিকা অফিস একটি সিস্টেমের মধ্যে কাজ করে। প্রথমে রিপোর্টার সংবাদ পাঠায়। একজন তা রি-চেক করে। এরপরে সেটা প্রুফ রিডার দেখেন, এরপরে সেটা ম্যাকআপ হয়ে প্রেসে চলে যায়। এই যে সিস্টেম সেটা দেশের সকল কিছুতে থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
দেশের সবাইর মধ্যে যদি সততা, সম্মান, আন্তরিকতা থাকে তাহলে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সেরা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মেধাবিদের খনি। আমার দেশের মেধা দিয়েই চলছে পৃথিবীর অনেক কিছু। কিন্তু আমরা কেন পারছি না। কারন আমরা এ মেধাবীদের সঠিকভাবে গাইড করছি না। অনেকক্ষেত্রে তাদের মেধাকে ধ্বংস করছি। আমাদের উচিত এ মেধাবিদের পরিকল্পনা অনুযায়ি কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।