যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচার সভায় হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েও অল্পের জন্য বেঁচে ফেরাকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, তার বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যক্রমে কিংবা ঈশ্বরের কৃপায়। গুলির ঘটনার পর ১৫ জুলাই (সোমবার) রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে ট্রাম্প এরই মধ্যে উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে পৌঁছেছেন। এর আগে ১৪ জুলাই (রবিবার) মিলওয়াকিতে যাওয়ার পথে তিনি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি দেশকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করতে চান। তবে সেটি কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সংশয় আছে তার। তবুও মানুষ খুবই বিভক্ত হয়ে আছে বলে তিনি তাদের একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।
এদিকে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বিভক্ত দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত রবিবার ওভাল অফিস থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সহিংস উত্তাপ কমানোর সময় এসেছে। এ পরিস্থিতি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। বাইডেনের ভাষ্য, একটি গভীর বিভাজনের নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনা দুপক্ষেরই (ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান) দায়িত্ব ছিল।
স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার এলাকায় ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশে হামলা হয়। সমাবেশস্থলের কাছে একটি একতলা ভবনের ছাদ থেকে মঞ্চ লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি গুলি করেন হামলাকারী। এ ঘটনায় ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশে ফুটো হয়ে যায়। এ হামলার ঘটনায় দর্শকসারিতে থাকা কোরি কম্পারেটর নামের ৫০ বছর বয়সের এক ব্যক্তি নিহত হন। আরও দুজন গুরুতর আহত হন।
ট্রাম্পের সমাবেশে হামলা করেছিলেন টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস নামের ২০ বছরের এক যুবক। রিপাবলিকান পার্টির নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন তিনি। ক্রুকস পেনসিলভানিয়ার বেথেল পার্ক এলাকার বাসিন্দা। তদন্তকারীরা বলছেন, ক্রুকস কেন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের সমাবেশে গিয়ে হামলা করলেন, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হামলার পরপরই সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের গুলিতে নিহত হন ক্রুকস। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র তথা পুরো বিশ্বের প্রধান আলোচনার বিষয় ওই ঘটনা। বিশ্বনেতারাও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেওয়া ওই ঘটনার পর ট্রাম্প অবশ্য তার নির্বাচনী কর্মসূচিতে কোনো বদল আনেননি। গতকাল রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে ট্রাম্প এরই মধ্যে উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে পৌঁছেছেন। গত রবিবার ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে ট্রাম্প মিলওয়াকিতে যাওয়ার পথে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেছেন তার জীবন প্রায় হারাতে বসার অভিজ্ঞতার কথা। এ সাক্ষাৎকারেই ট্রাম্প তার বেঁচে ফেরাকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তোলার সুযোগ বলে বর্ণনা করেছেন এবং রিপাবলিকান সম্মেলনের বক্তব্য নতুন করে লিখেছেন বলে জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন এক্সামিনার পত্রিকাকে ট্রাম্প বলেন, ‘বাস্তবতা জেঁকে বসছে। আমি জনতার দিক থেকে অন্যদিকে তেমন তাকাই না। ওই মুহূর্তে আমি যদি তা না করতাম, তাহলে আজ আমরা এখানে কথা বলতাম না, বলতাম কি?’
ট্রাম্পের ধারণা, গুলির ঘটনার সময় তিনি তার বক্তব্যের লিখিত একটি অংশ দেখার জন্য পোডিয়ামের দিকে ঝুঁকেছিলেন। মূলত এ কারণেই তিনি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। ট্রাম্প জানান, তার চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, তার ফিরে আসা একটি ‘অলৌকিক ঘটনা’।
ট্রাম্প এ সময় একই সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, আমার এখানে থাকার কথা ছিল না, আমার তো মারা যাওয়ার কথা। সৌভাগ্যক্রমে কিংবা ঈশ্বরের কৃপায় বেঁচে ফিরে এসেছেন বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন। মিলওয়াকিতে পৌঁছে বিমানের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে তিনি কয়েকবার মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে ছুড়ে দেন।
বিবিসি বলছে, মিলওয়াকির রিপাবলিকান কনভেনশনেই ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে মঞ্চে ভাষণও দেবেন ট্রাম্প। সেই ভাষণের কথাগুলোই সম্পূর্ণ নতুনভাবে লিখছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন এক্সামিনারকে ট্রাম্প বলেন, বৃহস্পতিবার আমি যে বক্তৃতা দেব সেটি বিশেষ কিছু এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু হবে। গোটা দেশকে এক করার এটাই সুযোগ। এমনকি গোটা বিশ্বকে এক করার সুযোগ এটাই। আমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই বক্তব্যটাও হবে দুদিন আগের তুলনায় অনেক অনেক ভিন্ন।
গোলাগুলির সেই মুহূর্তের বর্ণনায় ট্রাম্প বলেন, আমি জানতাম পৃথিবী এ ঘটনা দেখছে। আমি জানতাম, ইতিহাস এর বিচার করবে। আমি এও জানতাম যে, এ মানুষদের জানাতে হবে আমরা ঠিক আছি। তিনি বলেন, আমি দেশকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করতে চাই। তবে আমি জানি না সেটি সম্ভব কি না। মানুষজন খুবই বিভক্ত হয়ে আছে।
ট্রাম্প এর আগে ট্রুথ সোশ্যালে রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনের সময় দুদিন পেছানোর ইচ্ছার কথা জানালেও পরে নির্ধারিত সময়সূচিতেই অটল থাকেন তিনি। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, আমি একজন ‘হামলাকারী’ বা সম্ভাব্য আততায়ীকে সম্মেলনের সময়সূচি পরিবর্তনে আমাদের বাধ্য করতে দিতে পারি না।
ট্রাম্পের ওপর হামলার পর রিপাবলিকান সম্মেলনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে সিক্রেট সার্ভিস সম্মেলনের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন করেনি। চার দিনের এ সম্মেলনে কয়েক হাজার লোক সমাগম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সম্মেলনে ট্রাম্প তার রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন। নির্বাচনের আগে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দল নিজেদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন করতে জাতীয় সম্মেলন (ন্যাশনাল কনভেনশন) আয়োজন করে। আগামী মাসে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বিভক্ত দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত রবিবার ওভাল অফিস থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাইডেন কথাগুলো বলেন। তাকে সচরাচর ওভাল অফিস থেকে ভাষণ দিতে দেখা যায় না। তাই সংবাদমাধ্যমগুলো তার গতকালের ভাষণকে ‘বিরল ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সহিংস উত্তাপ কমানোর সময় এসেছে। আপনারা জানেন, আমাদের এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এটা শীতল করে আনা দরকার।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধক্ষেত্র, বিশেষত হত্যার ক্ষেত্র হতে দেওয়া হবে না। একটি গভীর বিভাজনের নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনা দুপক্ষেরই (ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান) দায়িত্ব ছিল। এ পরিস্থিতি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।