বিশ্বে প্রতিবছর অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৬০ কোটি মানুষ। এদের মধ্যে চার লাখেরও বেশি মানুষ মারা যান। একই কারণে বিশ্বে বছরে ৪০ শতাংশ শিশু রোগাক্রান্ত হয় ও এক লাখ ২৫ হাজার শিশু মারা যায়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার প্রাক-অবহিতকরণ সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএ কার্যালয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া। বক্তব্য রাখেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।
গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সাইয়েন্সের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, নোয়াখালী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিচার্স সায়েন্সের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ড. এস কে আরিফুল হক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিমান মাহমুদ, পথিকৃৎ ইনস্টিটিউট অব হেলথ স্টাডিজের চিফ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্সের ড. মাহফুজা মোবারক।
সেমিনারে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। তারমধ্যে ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু রয়েছে ৪ নম্বরে। তাই আমাদের গবেষণার মাত্রা বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষের আমাদের গবেষণার সময়সীমা পরিবর্তন করা (বাড়ানো) দরকার যেখানে সেখানে সময় দেওয়া হয় এক বছর।
ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তা নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যগুলো নিয়ে গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচকের বক্তব্যে ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করাও একটি ইবাদত। এর আগে ১৩টি দুধের স্যাম্পলের মধ্যে ১১টিতে হেভি মেটাল পাওয়া গিয়েছিল। এটি নিয়ে কাজ করার কারণে তা থেকে উত্তরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১০টি গবেষণায় অর্থায়ন করা হচ্ছে। আশা করি দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় এটি বড় অবদান রাখবে। খাবারকে আকর্ষণীয় করতে স্ট্রিট ফুডগুলোতে নানান ধরনের রং ব্যবহার করা হয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
স্বাগত বক্তব্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মন্ডল বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে প্রতিবছর বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়, মারা যান চার লাখ মানুষ। একই কারণে বিশ্বে বছরে ৪০ শতাংশ শিশু রোগাক্রান্ত হয় ও এক লাখ ২৫ হাজার শিশু মারা যায়।
ড. শারমিন রুমি আমিন বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষের তথা নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাত্রা এত বেশি যে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এক রোগের ওষুধ খেলে অন্য রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
ড. এস কে আরিফুল হক বলেন, স্কুলের সামনে বিক্রি হওয়া আচার, ফুসকাসহ যেসব খাবার শিশুরা খায়, সেসব থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
ড. মো. আব্দুল মাসুম বলেন, দেশে পশু মোটাতাজাকরণে স্ট্রয়েট ড্রাগ ব্যবহার হচ্ছে না বলা হলেও কিন্তু খামারিরা এটি ব্যবহার করছেন। খামারিরা প্রথমে স্বীকার না করলেও পরবর্তী সময়ে তারা জানান তারা হলুদ বা গোলাপি বড়ি ব্যবহার করেন। এসব ড্রাগ সীমান্ত এলাকায় বেশি ব্যবহার হয়। কেননা ভারত থেকে এগুলো সহজেই পাচার হয়ে দেশে আসে। আমরা পশুর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে স্ট্রয়েড ব্যবহারটা তুলে ধরবো।
ড. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকান বেশি। শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ফাস্টফুড খান। তারমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাবার বেশি খান। এসব তৈলাক্ত খাবারে জিহ্বায় আলাদা স্বাদ জমে। তাতে করে এসব খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ কাজ করে। তখন অন্য খাবার ভালো লাগে না।