দেশের রাজনীতিতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ একটি আলোচিত-সমালোচিত নাম। তেমনি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের নামও। এরশাদের দল জাতীয় পার্টিতে কোনো পদ পদবী নেই বিদিশার; দলটির শীর্ষ নেতাদেরও সঙ্গেও তার সখ্য নেই বললেই চলে।
জাতীয় পার্টির কিছুতেই না-থাকা বিদিশা মাঝেমধ্যে সরব হন দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনায়। সম্প্রতি তিনি জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনের আহ্বান নিয়ে ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এই যাচ্ছেন সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে আবার যাচ্ছেন রংপুরে এরশাদের পিতৃভূমিতে।
সবশেষ এরশাদের ৯৩তম জন্মদিনে হঠাৎ রাজধানীতে মোটর শোভাযাত্রা করে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনার জন্ম দেন বিদিশা। তাই গুঞ্জন উঠেছে, কোনও উদ্দেশ্য নিয়েই কি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছেন বিদিশা? এর অবশ্য পরিস্কার উত্তরও দিচ্ছেন বিদিশা। বলছেন, দেশের মানুষের জন্য তিনি কাজ করতে চান। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরের হাত থেকে দলকে বাঁচানোই তার বড় উদ্দেশ্য।
রবিবার সন্ধ্যায় বিদিশা সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। জিএম কাদের পদ বিক্রি করে দল শেষ করে দিয়েছে। ৫ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত পদ বিক্রি করছেন। এসব থেকে দলটা বাঁচাতে হবে।’
বিদিশার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়- আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা কি? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে কাজ করতে চাই। ৫৮ দল নিয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রধান হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে দেখা যাবে কোন ভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবো।’
শনিবার ছাদ খোলা গাড়িতে বিদিশা এরশাদ কয়েকশ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা করেন। মাঝে গুলশানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একদল তরুণ নেতৃত্ব খুঁজছি। যারা আমার সঙ্গে দেশের জন্য, মেহনতি মানুষের হয়ে সংসদে কথা বলবে।’
এসময় বিদিশা নিজেকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, ‘তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠিত হচ্ছে। ছেলে এরিক এরশাদও দলে যুক্ত হয়েছেন। তবে মোটর শোভাযাত্রায় এরিক ছিলেন না।’
শোভাযাত্রায় বিদিশার সঙ্গে তার গঠিত কমিটির কো–চেয়ারম্যান, উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অবশ্য বিদিশাকে নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই বলেই জানিয়েছেন এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। উল্টো প্রেসিডেন্ট পার্ক অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ আছে বিদিশার বিরুদ্ধে।
যেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হন বিদিশা
২০০০ সালে এরশাদকে বিয়ে করেন কবি আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশা সিদ্দিক। সন্তান শাহতা জারাব এরিকের জন্মের পর সেই সংসার টুটে যায় ২০০৫ সালে। এরপর থেকে মূলত নিজের গড়া ‘বিদিশা ফাউন্ডেশন’ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন তিনি। তখন এরশাদের দেওয়া চুরির মামলায় জেলেও যেতে হয়েছিল বিদিশাকে। আইনি লড়াই চালিয়ে এরিককে নিজের কাছে রাখেন এরশাদ।
জানা যায়, এরশাদের সঙ্গে বিয়ের সূত্রে জাতীয় পার্টিতে পদ নিয়ে সক্রিয় হয়েছিলেন বিদিশা, কিন্তু বিচ্ছেদের পর হারিয়ে যান দল থেকেও। এরশাদের মৃত্যুর পর এখন সন্তানের সূত্রে আবার জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় হচ্ছেন তিনি।
২০১৯ সালের নভেম্বরে এরশাদের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠে পড়েন বিদিশা। তার ছেলে এরিককে ‘চরম অবহেলা করে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানো হয়েছে’ বলেও তখন তিনি অভিযোগ করেন। এরপর থেকে সেখানেই তিনি এরিককে নিয়ে থাকছেন। নিজের সাংগঠনিক কাজকর্মও এখানেই সারেন।
এদিকে গতবছর নভেম্বরে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এরিক জাতীয় পার্টির ‘নতুন কমিটি’ ঘোষণা করেন। এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের অসুস্থতার মধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে তার সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকেই জাতীয় পার্টির ‘পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়’ সক্রিয় হতে শুরু করেন বিদিশা।
অবশ্য তখন জিএম কাদের বলেছিলেন, এই পদক্ষেপের কোনো সাংগঠনিক কিংবা আইনি ভিত্তি নেই। যদিও এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের আসনে বসানো হয় এরশাদের স্ত্রী রওশনকে। সংসদে রওশন হন বিরোধীদলীয় নেতা আর কাদের হন বিরোধীদলীয় উপনেতা।
অন্যদিকে এরিক ওই সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদকে চেয়ারপারসন ঘোষণা করলেও ওইসময় জাতীয় পার্টি জানায়, রওশন জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসন হতে চান না।
কী বলছেন বিদিশা?
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মূল অংশে কোনো পদ পদবী না থাকলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনিই জাতীয় পার্টির কর্ণধার বলে দাবি করেছেন বিদিশা সিদ্দিক।
ঢাকাটাইমসকে বিদিশা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে জাতীয় পার্টি, সেই জাতীয় পার্টিই আমরা লিড দিচ্ছি। তিনি (জিএম কাদের) অবৈধ। তার নামে কোর্টে রিট আছে। তিনি বৈধ কি অবৈধ, কোর্টের রায় এখনো আসেনি। আর কিছু দিন পরে জনগণ সেটা দেখবে তিনি একজন অবৈধ চেয়ারম্যান।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে আরো চমক আসছে বলেও জানান বিদিশা। তবে কোন ধরণের চমক আসবে তা এখনই জানাতে নারাজ বিদিশা।