এক তৃপ্ত আত্মার অন্তিম যাত্রা

ক্রীড়া ডেস্ক
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৭

ফুটবল ক্যারিয়ারে যেখানে একটি বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার অপেক্ষায় থাকেন বড় বড় ফুটবল তারকারা, সেখানে বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে নিজ দলকে তিনবার শিরোপা এনে দিয়েছেন কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলে। ফুটবলে পেলে যেন এক তৃপ্ত আত্মা। সেই আত্মার অন্তিম যাত্রা দেখল পুরো বিশ্ব। জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন তিনি।
দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার পর ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পেলে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২।
ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের প্রতিটি শিশুর ধ্যান-জ্ঞানই যেন ফুটবল। কালো মানিক খ্যাত পেলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর সাও পাওলো শহরের ট্রেস কোরাকয়েসে জন্ম নেওয়া পেলে ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ফুটবল পাগল। বাল্যকাল থেকেই ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন তিনি।
তবে ফুটবলে পেলের অনুপ্রেরণা ছিলেন তার বাবা। তিনিও একজন ফুটবলার ছিলেন। খেলতে ‘ফ্লুমিনেস’নামক একটি ক্লাবে। এদিকে ১৯৫৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কপাল খুলে পেলের। সান্তোসের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনের প্রায় দুই দশক ধরে খেলে এই ক্লাবের হয়েই।
ক্লাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করায় এক বছর পরেই জাতীয় দলে ডাক পান ফুটবলের সম্রাট নামে খ্যাত পেলে। ১৬ বছর বয়সে তার অভিষেক হয় ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। অবশ্য সে ম্যাচে হেরে যায় ব্রাজলি। তবে পেয়ে যান প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।
এর ঠিক এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের আসর বসে সুইডেনে। সেই বিশ্বকাপে টগবগে কালো এই ছেলেটি করেন মোট পাঁচটি গোল। আর তাতেই ইউরোপ থেকে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন পাঁচবারের শিরোপা জয়ী ফুটবল দল ব্রাজিল।
পরের দুই বিশ্বকাপে সুবিধা করতে পারেনেনি পেলে। দুই বিশ্বকাপ মিলে গোল করতে পেরেছেন মাত্র একটি। তবে ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। দলের সঙ্গে থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বজয়ী দলের সদস্য হতে পারেন পেলে। আর মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা আক্রমণাত্মক দল নিয়ে অংশ নেয় সেলেসাওরা। ফের বিশ্বকাপ জেতে লাতিন আমেরিকান দলটি। পেলে করেন চারটি গোল।
ব্রাজিলের পক্ষে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলে। ২০০৭ সালে ফিফা ৬২ বিশ্বকাপের ফাইনালের পদকটি তার হাতে তুলে দেন। ফলে পেলেই হয়ে যান তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল জয় করা একমাত্র ফুটবলার। ফিফার পক্ষ থেকে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন পেলে। ব্রাজিলের জার্সিগায়ে ৯১ ম্যাচে পেলের গোল সংখ্যা ৭৭টি। সেই থেকে কাতার বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ব্রাজিলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সবধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নেন ফুটবল সম্রাট। দীর্ঘ ২১ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ১৩৬৩টি ম্যাচ। আর গোল করেছেন মোট ১২৮১টি।
ফুটবলে পেলের যত রেকর্ড:
কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়ের খেতাব: মাত্র ১৭ বছর ২৪৯ দিনে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতেন পেলে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। দুই গোল করেন পেলে নিজেই।
তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড: পেলে ছাড়া বিশ্ব ফুটবলে আর কারও তিনবার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড নেই। এই কিংবদন্তি ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭২ সালে বিশ্বকাপ জিতে ফুটবল ইতিহাসে নিজের নাম স্থায়ী করে যান।
কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোলের রেকর্ড: ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে গোল করেছিলেন পেলে। তাতেই গড়েন কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোলের রেকর্ড।
বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক: ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফুটবলের কালো মানিক পেলে। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৪ দিন।
গোলের সংখ্যায় রেকর্ড: ক্লাব ও দেশের হয়ে পেলে এক হাজার ৩৬৩টি ম্যাচ খেলে মোট গোল করেছিলেন এক হাজার ২৮১টি, যা বিশ্ব রেকর্ড।