বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের একপর্যায়ে আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘আমার এখন যে স্কিল সেট আছে, এটা একটা প্যাকেজ। আমি ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশে যেমন কাজ করেছি, তেমনি তাজিকিস্তান বা উজবেকিস্তানেও।’ প্রথম দুটি দেশকে তো আর না জানার কোনো কারণ নেই; কিন্তু আমিনুলের বিষয়ে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন না, তাঁদের একটু খটকাই লাগতে পারে পরের দুটি নাম শুনে।
ক্রিকেট ও তাজিকিস্তান-উজবেকিস্তান পাশাপাশি খুব পরিচিত শব্দ নয়। আসলে এক দশকের বেশি সময় ধরে এই কাজটাই করছেন আমিনুল। আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন দেশে ঘুরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পরিকল্পনা সাজিয়ে এমন সব দেশে ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গেছেন, যাদের সঙ্গে ব্যাট-বলের সংযোগ খুব একটা নেই।
ওই দেশগুলোর কয়েকটির নাম বললে আমিনুলের কাজটা বুঝতে আরেকটু সুবিধা হওয়ার কথা—চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর। এসিসি ও আইসিসির সঙ্গে মিলে এসব দেশে হাই পারফরম্যান্স ও অন্য প্রোগ্রামের পরিকল্পনা ও তা কীভাবে কাজে এসেছে, কোচদের কাছ থেকে তা জানার কাজ করতেন আমিনুল।
করতেন বলতে এখনো আমিনুল তা–ই করেন। আইসিসির সঙ্গে তাঁর আগের চুক্তির মেয়াদ ছিল জুন পর্যন্ত। আমিনুল জানিয়েছেন আইসিসির চাকরিটা তিনি ছেড়েই এসেছেন। আগামী অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচন পর্যন্ত তাঁর সভাপতির মেয়াদ, এরপর আবার আইসিসিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
২০০৪ সালে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করার পরও বাংলাদেশেই ছিলেন আমিনুল। কোচিং কোর্সের লেভেল-১, লেভেল-২, লেভেল-৩ সম্পূর্ণ করে এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন কোচ হিসেবে।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সংযোগ আমিনুলের ছিল খেলোয়াড় থাকার সময় থেকেই। নব্বইয়ের দশকে তাঁর স্ত্রী পড়তে যান দেশটিতে। এর পর থেকে যাওয়া-আসা বেড়ে যায় আরও। পরে ২০০৩ সালে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতেই থিতু হন।
ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।
ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।ছবি: শামসুল হক
সেখানেও শুরুতে কোচিংই করিয়েছেন। পরে আইসিসিতে যুক্ত হন। দক্ষতা অর্জন করেন বায়োমেকানিকস, ভিশন, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, খেলোয়াড়দের মনোজগতের (সাইকোলজি) মতো বিষয়গুলোয়। সেসব কাজে লাগিয়েই ক্রিকেটে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোয় কাজ করেছেন তিনি। সংগঠকের ভূমিকায় অবশ্য এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে আমিনুলকে।
খেলোয়াড়ি জীবনে বর্ণিল একটা ক্যারিয়ার পাড়ি দিয়ে এসেছেন। প্রায় ১৪ বছর খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে ১৬ ম্যাচে মাঠে নেমে দুটিতে জয় পেয়েছেন। একটি ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া সেই ঐতিহাসিক জয়।
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও আমিনুল। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন। ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ওই সেঞ্চুরি ছাড়া আরও দুটি ফিফটি আছে তাঁর, এই সংস্করণে করেছেন ৫৩০ রান।
৩৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অবশ্য কখনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তিন ফিফটিতে এই সংস্করণে ৭৯৪ রান এসেছে আমিনুলের ব্যাট থেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচে চার সেঞ্চুরিতে করেছেন ১৯৪০ রান।
কঠিন এক সময়ে বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার আগে জীবনবৃত্তান্তটা বেশ ভারীই বলা যায় আমিনুলের। কিন্তু তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। যাঁর উত্তরসূরি হিসেবে চেয়ারে তিনি বসছেন, সেই ফারুক আহমেদ ছিলেন সাবেক কোনো ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম বিসিবি সভাপতি। সংগঠকের ভূমিকায় ৯ মাসও টিকতে পারেননি। এখন তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিচ্ছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল।