উদ্যোগটা দারুণ ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। ব্যতিক্রমীও বটে। গত অক্টোবরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাবিথ আউয়াল পুরো নির্বাহী কমিটি নিয়ে মিট দ্য প্রেস আয়োজন করেছিলেন, এই ৮ মাসে কি করেছে ও আগামী ৬ মাসে কি করতে চান তা উপস্থাপন করতে।
বিশেষ করে, গত ৪ জুন ভুটান ও ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে যে উম্মাদনা ও আয়োজন নিয়ে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে সেই বিষয়টিও তুলে ধরার জন্য চারদিনের মাথায় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাবিথ আউয়াল। তবে এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাফুফেতে যে একটা বিভেদের সুর বাজছে, সে আভাসও মিলছে।
নির্বাহী কমিটির ১৪জন উপস্থিত ছিলেন এই মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে। ডায়াসের একদম বাম পাশে বসেছিলেন সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহিন। সেখানেও ছিল দৃষ্টিকটু বিষয়। তিনি যেন সবার চেয়ে একটু আলাদা ও দূরত্ব নিয়েই বসেছিলেন। ডায়াসে ওঠার পর থেকেই মুখ ভার করে বসেছিলেন শাহিন। যদিও তিনি অত্যন্ত মিশুক মানুষ। সবার সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকাই তার অভ্যাস। তবে এই অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন ভাগ-গম্ভীর।
প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তারপর বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানরা এক এক করে তাদের কার্যক্রম ও আগামী ৬ মাসের পরিকল্পনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সবার শেষে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার মাইক দেন শাহিনকে এবং তাকে বক্তব্য দিকে বলেন বাফুফের অভ্যন্তরীণ অডিট ও সরকারি সম্পর্ক বিষয়ে।
শাহিন নির্ধারিত বিষয়ে বক্তব্য না দিয়ে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আমাকে যে বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলেছেন, আমি সে বিষয়ে বলবো। আমি ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্য হিসেবে আমার একটাই এজেন্ডা, (কোচ) ক্যাবরেরার পদত্যাগ চাই। এটা আমার একার দাবি নন, ১৮ কোটি মানুষের কথা। আমি ১৮ কোটি মানুষকে ক্যাবরেরার হাত থেকে মুক্ত করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেছেন, 'ক্যাবরেরা খেলাই বোঝেন না। তিনি সর্বোচ্চ তৃতীয় বিভাগ ও পাইওনিয়ার লিগের কোচিংয়ের যোগ্যতা রাখেন। আমি মনে করি, পুরো কোচিং স্টাফই বদলে ফেলা উচিত।'
সাখাওয়াত হোসেন শুধু বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যই নন, বাফুফের জাতীয় দল কমিটিরও সদস্য। এই কমিটির প্রধান বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বাফুফে সভাপতির ঘনিষ্টজনও বটে। তাবিথ আউয়ালের ক্লাব নোফেল স্পোর্টিংয়ের সাধারণ সম্পাদক শাহিন।
সংবাদ সম্মেলনে যখন এভাবে কোচের পদত্যাগ দাবি করেন শাহিন, তখন বাফুফে সভাপতিকে একটু বিব্রত হতেই দেখা গেল। অন্যরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন। এই ঘটনা বাফুফের অভ্যন্তরের একটা অবস্থা প্রকাশ করে দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পর বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকেই কোচ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে ন্যাশনাল টিমস কমিটির চেয়ারম্যান যেহেতু স্বয়ং বাফুফে সভাপতি তাই কেউ প্রকাশ্যে বা অন্য রেকর্ডে মন্তব্য করেননি। তবে শাহিন হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। বাফুফের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে কথা বলেছেন এই সদস্য। এর মধ্য দিয়ে বাফুফের অভ্যন্তরে যে মতবিরোধ আছে তার আভাস মিলেছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আছেন ক্যাবরেরা। বাংলাদেশ জাতীয় দলে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়োগপ্রাপ্ত বিদেশি কোচ তিনি। তার সঙ্গে বাফুফের চুক্তি আগামী এপ্রিল পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্যাবরেরার কাছে প্রশ্ন ছিল, হারলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন কি না তিনি। এ প্রসঙ্গে তখন কোচ নিজের মেয়াদের কথা মনে করিয়ে দেন।
ক্যাবরেরার পদত্যাগ দাবি করে বাফুফে সদস্যের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিয়েছেন সতর্ক অবস্থান। তার কথা, ‘বিষয়টা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলব। কোচের কাজের পর্যালোচনা হবে। সেটা হওয়ার পর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে নেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।’
সদস্য শাহিনের এমন বক্তব্যে বাফুফেতে কোনো বিভেদের ইঙ্গিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, 'যেটা হয়েছে সেটা অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের ইস্যুতে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। একটা জায়গায় কাজ করতে হলে, একটা বড় ফ্যামিলি হলে আভ্যন্তরীন অনেক সমস্যাই হবে। এগুলো আমরা সমাধান করবো। আমি মনে করি না যে, এমন কিছু হয়েছে যেটাকে ব্যাপকভাবে বড় করে দেখা উচিত।'