বিশ্বকাপ এলেই মোটামুটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। একপক্ষ ব্রাজিল, আরেকপক্ষ আর্জেন্টিনার সমর্থক। এ নিয়ে উন্মাদনার খবর দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশে। এর হাওয়া পৌঁছে গেছে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রেও। সেখানে এক আর্জেন্টাইন অধ্যাপকের দেখা হয়েছিল প্রবাসী এক বাংলাদেশির সঙ্গে। তার কাছ থেকে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা সমর্থকের আধিক্যের কথা জেনে রীতিমতো বিস্মিত তিনি।
ওই ব্যক্তির নাম মার্টিন বেরাজা। আর্জেন্টাইন এ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একজন সহকারী অধ্যাপক।
সম্প্রতি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে মার্টিন জানান, তিনি ট্যাক্সিতে চড়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। এসময় গাড়ির চালক তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথা থেকে এসেছেন?’ আমি বলি, ‘আর্জেন্টিনা।’
এরপর চালক পেছনে ঘুরে তার জ্যাকেট খুলে দেখান। তিনি আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি পরা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমরা অনেক বড় ভক্ত! আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তো? দাঁড়ান দেখাচ্ছি...’
প্রথমে ওই বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক তার বাড়ির ছবি দেখান। এর বারান্দায় আর্জেন্টিনার বড় একটি পতাকা ঝুলছিল। তারপর ইউটিউব চালু করেন এবং শত শত বাংলাদেশি ভক্ত আর্জেন্টিনার জার্সি পরে মিছিলের একটি ভিডিও দেখান।
সেই ভিডিওর লিংকও শেয়ার করেছেন আর্জেন্টাইন অধ্যাপক মার্টিন। এটি ছিল ‘বাগেরহাটে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উন্মাদনা’ শিরোনামে একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন।
ঘটনা এখনো শেষ হয়নি। এরপর ওই গাড়িচালক তার ভাইকে (মার্টিনের মতে) ফোন করেন এবং জানতে চান, ‘তুমি কোন দল সমর্থন করো?’ তার ভাই তখন চিৎকার করে বলেন, ‘আর্জেন্টিনা! আর্জেন্টিনা!’
এসময় গাড়িচালক ও তার ভাইয়ের মধ্যে বাংলায় কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবহৃত ভাষার নাম জানতেন না মার্টিন। তিনি স্বীকার করেছেন, এটি জানতে তাকে খোঁজ-খবর করতে হয়েছে (হয়তো গুগলে সার্চ করেই জেনেছেন)।
মার্টিন আরও জানান, সেই বাংলাদেশি তাকে বলেছেন, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেন এবং কাতার তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন গন্তব্য। এরপর আমি উইকিপিডিয়া দেখি। কাতারে চার লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন।
মার্টিন বলেন, ‘এই পর্যায়ে আমি হতবাক! বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি (আবারও উইকিপিডিয়াকে ধন্যবাদ)। তার (গাড়িচালক) হিসাব অনুযায়ী, আর্জেন্টিনার চেয়েও আর্জেন্টিনা-সমর্থক বেশি রয়েছে বাংলাদেশে। এমনকি, কাতারেও আর্জেন্টাইনদের চেয়ে বেশি বাংলাদেশি সমর্থক থাকবে।’
শরীয়তপুরে ৮০০ মোটরসাইকেল নিয়ে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের শোভাযাত্রা
হিসাবে হয়তো খুব একটা ভুল করেননি মার্টিন। আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটির মতো। আর বাংলাদেশে যদি অর্ধেকও হয়, তাহলে অন্তত আট কোটি আর্জেন্টিনা ভক্ত রয়েছে। কাতারের হিসাবও একই। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ দুই লাখ আর্জেন্টিনা ভক্ত হলে এটিও বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া আর্জেন্টাইনদের সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
ঘটনার শেষপর্যায়ে মার্টিনকে আলিঙ্গন করেন আর্জেন্টিনা-ভক্ত সেই বাংলাদেশি। এরপর গাড়ি থেকে নেমে যান আর্জেন্টাইন অধ্যাপক।
মার্টিন জানিয়েছেন, এই ছোট্ট ঘটনা তাকে একটি বিষয় শিখিয়েছে। তা হলো শ্রেণি, বয়স, জাতি ও জাতীয়তা নির্বিশেষে ফুটবল এবং বিশ্বকাপের জন্য ভালোবাসা।
আর্জেন্টিনার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ রাতে আলবিসেলেস্তেদের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো।