ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে আকাশে সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। যত শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রই হোক, কয়েক শ উপগ্রহের তৈরি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি করা জালে ঠিক ধরা পড়ে যাবে। কোনো আক্রমণই আমেরিকার মাটিতে আছড়ে পড়বে না। সুরক্ষিত থাকবেন মার্কিন নাগরিকরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) এই 'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এর নকশাও বাছাই করেছেন। এই প্রকল্প খরচ হবে মার্কিন কোষাগারের ১৭৫ বিলিয়ন ডলার বা ২১ লাখ কোটি টাকা। এই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের 'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নকশা বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদের শেষের দিকে তা কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এই প্রকল্পের তদারকি করবেন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন। বর্তমানে স্পেস ফোর্সের স্পেস অপারেশনের ভাইস চিফ জেনারেল ওয়েটলিন।
মঙ্গলবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সিস্টেমে ভূমি, সমুদ্র এবং মহাকাশে 'পরবর্তী প্রজন্মের' প্রযুক্তি থাকবে। এই তালিকায় রয়েছে মহাকাশভিত্তিক সেন্সর এবং ইন্টারসেপ্টর। গোল্ডেন ডোমের বিষয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, ঐ সিস্টেম 'বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র বা মহাকাশ থেকে লঞ্চ করা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে পারবে।' এই ব্যবস্থা কিছুটা ইসরাইলের 'আয়রন ডোম' থেকে অনুপ্রাণিত।
ইসরাইল ২০১১ সাল থেকে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে আয়রন ডোম ব্যবহার করেছে। তবে গোল্ডেন ডোম এর তুলনায় বহুগুণ বড় হবে এবং তা বিস্তৃত রেঞ্জের হুমকিকে মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সর্বাধুনিক যে কারণে: গোল্ডেন ডোম যে সব হুমকিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে তার মধ্যে রয়েছে
হাইপারসনিক অস্ত্র, যা শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম এবং 'ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম' বা ফোবসও রয়েছে। ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা সম্ভব।
এই সব হুমকির দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেছেন, এগুলো সব আকাশেই নিষ্ক্রিয় করা হবে। এর সাফল্যের হার ১০০ শতাংশের খুব কাছে। এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গোল্ডেন ডোমের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সুযোগ করে দেওয়া যেন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে আকাশে থাকা অবস্থায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে সেগুলোকে থামানো যায়। এই বহুমুখী সিস্টেম কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই কর্মসূচির জন্য প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ লাখ কোটি টাকার বেশি)। প্রাথমিক আড়াই হাজার কোটি ডলার আসবে তার 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অন ট্যাক্স' থেকে। যদিও ঐ বিল এখনো পাশ হয়নি। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অবশ্য অনুমান করেছে যে ঐ খরচ আরো অনেক বেশি হতে পারে। তাদের অনুমান গোল্ডেন ডোমের শুধু মহাকাশভিত্তিক অংশের জন্যই ২০ বছরে ৫৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে সরকার।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা রাশিয়া ও চীনের ডিজাইন করা নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো নয়। -বিবিসি