দীর্ঘ ২৩৩ বছরের ইতিহাসের অবসান ঘটাতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, আগামী বছর থেকে আর তৈরি করা হবে না এক সেন্টের মুদ্রা—অর্থাৎ পেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ইতিহাসে এটিকে ধরা হচ্ছে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে উৎপাদন ব্যয় ও প্রেসিডেন্টের সরাসরি হস্তক্ষেপ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘একটি পেনি বানাতে খরচ হচ্ছে ৩ দশমিক ৬৯ সেন্ট—এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অপচয়।’ এরপরই তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন এই ‘অলাভজনক মুদ্রা’ বন্ধ করতে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে একটি পেনি তৈরি করতে খরচ পড়ছে এর মূল্যমানের দ্বিগুণেরও বেশি। শুধু ২০২৪ অর্থবছরেই পেনি উৎপাদনে সরকার লোকসান গুনেছে ৮৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। নতুন করে আর পেনির জন্য ধাতব টেমপ্লেটের অর্ডার দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। এর ফলে বছরে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে সরকারের।
তবে পেনি উৎপাদন বন্ধ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। ‘আমেরিকানস ফর কমন সেন্টস’–এর নির্বাহী পরিচালক মার্ক ওয়েলার বলেন, ‘এটি একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। এর প্রভাবে খুচরো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সরকারকেও শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচ করতে হতে পারে।’
তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ আইনি ক্ষমতা রাখেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পেনি হবে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাব্যবস্থা থেকে অবসৃত হওয়া ১২তম মুদ্রা। এর আগে অর্ধ সেন্ট, দুই সেন্ট, বিশ সেন্ট ও ত্রিমের মতো কয়েনও ইতিহাসে বিলীন হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে প্রায় ১১৪ বিলিয়ন পেনি চলমান থাকলেও এর ব্যবহার ন্যূনতম। সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা এই মুদ্রাটির পরিণতি যেন এক দীর্ঘশ্বাস—নীরবে বিদায় নিচ্ছে আমেরিকান অর্থনীতির এক ঐতিহাসিক পরিচয়। শেষ বাক্যটি যেন এক প্রতীক: পেনি আর ‘সেন্ট’ হয় না।