অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিতাড়নে, ‘স্যাঙ্কুচুয়ারি সিটি’খ্যাত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আশ্রয়ের জন্য নিরাপদ সিটিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন। বর্তমানে স্যাংকচুয়ারি সিটিগুলোতে ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা কেবল নিজেদের উদ্যোগে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আটক করতে পারে। সিটি পুলিশ বা প্রশাসন তাদের কোনো সহায়তা করে না। ট্রাম্পের আদেশের এর অবসান ঘটবে এবং সিটি প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা ইমিগ্রান্টদের আটক করতে পারবে।
এছাড়া ইতিপূর্বে স্কুল, হাসপাতাল ও প্রার্থনাস্থলে অবৈধ ইমিগ্রান্ট অনুসন্ধানে ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ যাতে বিনা বাধায় কাজ করতে পারে, সেজন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি তার একটি আদেশের একটিতে পাম বন্ডি নামে একজন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমকে স্যাঙ্কুচ্যুয়ারি সিটিগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সকল আইনানুগ প্রতিকারমূলক ও প্রায়োগিক ব্যবস্থা অনুসরণের এখতিয়ার প্রদান করেছেন। আদেশের আরেকটি লক্ষ্য কোনো পুলিশ অফিসার অপরাধ সংঘটনে অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। অপর এক আদেশে পেশাদার ট্রাক ড্রাইভারদের ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আইনভঙ্গ করলে পুলিশ অফিসাররা তাদের ইংরেজিতে বোঝাতে পারে যে, কী কারণে তারা আইনত দন্ডলাভ করতে পারেন।
একটি ইমিগ্রেশন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগকারী অফিসারদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রার্থনাস্থল ও হাসপাতালের মতো স্থানে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের সন্ধান করার নীতিমালার বিরুদ্ধে মামলা করলে কীভাবে তা অগ্রাহ্য করে সন্ধান চালানো ও অবৈধদের গ্রেফতার করা যেতে পারে, সে বিষয়ক আইনি বিতর্ক নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালানো হবে। মামলাটি এমন এক সময়ে দায়ের করা হয়েছিল, যখন ইমিগ্রেশন অফিসাররা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করার সংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অফিসার সংখ্যা কম থাকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যত সংখ্যক অবৈধকে ডিপোর্ট করার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রকৃত ডিপোর্টেশন সংখ্যা এর চেয়ে অনেক কম বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারোলিন লেভিট সোমবার বলেছিলেন যে একটি নির্বাহী আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমকে রাষ্ট্র ও স্থানীয় এখতিয়ারগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে যে ট্রাম্প প্রশাসন “অভয়ারণ্য শহরগুলি” বিবেচনা করে, যখন প্রশাসন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশটি অপরাধী ইমিগ্রান্টদের সন্ধানে আইন প্রয়োগকারীরা বাধাহীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে রোচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে, সেখানে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অভিবাসন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে। ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ইমিগ্রেশন এজেন্টদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মিলওয়াকির এক বিচারকের বিরুদ্ধে মামলা করছে।
রোচেস্টারের মেয়র এবং সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট গত শুক্রবার মামলাটির সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, অভিযোগটি রাজনৈতিকভাবে আনা হয়েছে, এটি আইনানুগভাবে করা হয়নি। রোচেস্টার সিটি সকলের জন্য জননিরাপত্তা সুরক্ষায় তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্যান ফ্রান্সিসকোর এক ফেডারেল বিচারক সাময়িকভাবে সরকারকে একটি কার্যনির্বাহী আদেশের অংশবিশেষ কার্যকর করতে বাধা দিয়েছে, যা বিভিন্ন সংস্থা ও কাউন্টি থেকে তহবিল সংগ্রহ রোধে ফেডারেল ইমিগ্রেশন প্রয়োগকারীদের সহযোগিতা করে না। লেভিট গত সোমবার বলেছে, আইন মান্য করুন, আইনকে সম্মান করুন এবং ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেবেন না। কার্যনির্বাহী আদেশগুলি মঙ্গলবার তার দ্বিতীয় মেয়াদে ১০০ তম দিনে জারি করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৯,০০০ জন অবৈধ ইমিগ্রান্ট তাদের নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট করেছে। এ তথ্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা টম হোম্যান। একথা সত্য যে সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশ করলেও যারা প্রবেশ করেছেন তাদের খুব কম সংখ্যকের মধ্যে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১০০ দিন পূর্ণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ উপলক্ষে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি নিজের সফলতা তুলে ধরার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনা করেন। মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল রাতে মিশিগানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টম হোম্যান বলেন, সীমান্তকে নিñিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনার ফলে বেআইনিভাবে বিদেশিদের প্রবেশের প্রবণতা একেবারেই হ্রাস পাওয়ায় গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের ঘটনা কমেছে। এখানেই আমাদের সফলতা।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১০০ দিন উদযাপন ট্রাম্পের
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১০০ দিন পূর্ণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে মিশিগানে আয়োজিত সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘গভীর পরিবর্তন’ আনার জন্য কাজ করছে। এ সময় তিনি পূর্বসূরি জো বাইডেনকে উপহাস করেন এবং ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানের সমালোচনা করেন। পাশাপাশি, তার জনপ্রিয়তা হ্রাস সংক্রান্ত জনমত জরিপগুলোকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন।অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সফলতা তুলে ধরলেও চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা সবে শুরু করেছি, এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি।’
যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল শিল্পের প্রাণকেন্দ্র মিশিগানে ট্রাম্প দাবি করেন, গাড়ি নির্মাতারা নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য ‘লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে’। বিদেশি গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক শিথিল করার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন গাড়ি নির্মাতাদের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দূর করতেই এই পদক্ষেপ।এদিকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি) ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির জন্য তাকে দায়ী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া তিনটি শিশুর মায়েদের দেশটি থেকে ডিপোর্ট করায় তাঁরা মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী। তিনি এ কথা জানান। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাঁদের নিজ দেশ হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য থেকে ওই মায়েদের বিতাড়িত করা হয়। এই নারীদের স্বামীরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। অভিবাসন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) ও ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্ট (এনআইপি) বলেছে, জেনি লোপেজ ভিয়েলা নামের এক নারীকে গত শুক্রবার তাঁর দুই বছর বয়সী কন্যাসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। আরেক নারীকে তাঁর চার ও সাত বছর বয়সী সন্তানসহ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি। এসিএলইউ জানায়, চার বছর বয়সী শিশুটি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাকে কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা ছাড়াই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
জেনি লোপেজ অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর ১১ বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে। তার জন্ম হন্ডুরাসে।
যে উড়োজাহাজে লোপেজকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সেটিতে ওই মেয়েটিও ছিল। ওই তিন শিশুর মাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও তাদের বাবারা যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন। লোপেজের আইনজীবী মিচ গঞ্জালেজ বলেন, ‘উভয় পরিবার অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে। এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হবে ও করণীয় কী হবে, সেটিই ভাবছে পরিবারগুলো।’ এনআইপির অভিবাসনবিষয়ক অধিকারকর্মী মিশেল মেনডেজ এ পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, পরিবার দুটি ‘গভীর মানসিক আঘাতের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিষয়ক উপদেষ্টা টম হোম্যান জানান, শিশুগুলোকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়নি; বরং মায়েরা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টম হোম্যান আরও বলেন, ‘আপনি যদি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে মার্কিন নাগরিক সন্তান জন্ম দেন, তাহলে আপনি নিজেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন। এটা একান্তই মা–বাবার সিদ্ধান্ত ছিল…মায়েরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ হন্ডুরাসের ভাইস চ্যান্সেলর আন্তোনিও গার্সিয়া এএফপিকে জানান, সরকার বিষয়টি তদন্ত করছে। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সিওমারা কাস্ত্রো এ বিচ্ছেদ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা চাই, এ ঘটনায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হোক।