মে দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান

করিডোরের সিদ্ধান্ত সংসদ থেকে, অনির্বাচিতদের কাছ থেকে নয়

সরকারের একটি অংশ দলগুলোর মধ্যে বিরোধ উসকে দিতে চায় 
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ মে ২০২৫, ১৯:০০

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ উসকে দিতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী মানুষের মধ্যে এ ধরনের বিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করেছে।’ তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে ধাবিত হেওয়ার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
অনুষ্ঠানে তিনি মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘মানবিক করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর জচন্দ্র রায়, শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের  প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
দুপুর ২টায় শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। 
এছাড়াও ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুলসহ আশপাশের সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমসর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়। পলাতক স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এ জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের আইন বা সংবিধানে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান বা আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন সবদিক থেকে নিজেকে অননিবার্য মনে করে, তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।’
‘এ কারণেই বলতে চাই, কোনও ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষা যেন ব্যক্তি বা সরকারকে প্রলুব্ধ করতে না পারে; সে জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। নিয়মিত গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই দেশে গণমানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়’, বলেন তারেক রহমান।
জনগণের সরাসরি ভোটের মধ্যেই দেশে নতুন সরকার হয় ও সরকারের পরিবর্তন ঘটে, এটিই গণতান্ত্রিক রীতি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘তবে রাষ্ট্র স্বৈরাচারের কবলে পড়লে গণবিপ্লব বা গণঅধিকার আন্দোলনের মাধ্যমেও ফ্যাসিবাদের পরিবর্তন হয়। বিশেষ পরিস্থিতির সরকার অবৈধ নয়, তবে তারা কখনও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয়।’
মিয়ানমারে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ
তারেক রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে জনগণের মতামত নেয়নি বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেনি। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা, তা বলতে চাই না। দেশের স্বার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ ধরনের স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের মতামত নেওয়া দরকার ছিল।’
‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষা নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের স্বার্থ দেখতে হবে। মিয়ানমার, ভারত বা পাকিস্তান নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।’