নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দল, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি সংগঠনের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ২৪ জুন মেয়র নির্বাচনের প্রাইমারী অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস সহ প্রার্থীদের মধ্যে যারা রয়েছেন- সাবেক ষ্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো, স্টেট অ্যাসেম্বরীম্যান জোহরান মামদানী, ষ্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি ও জেসিকা রামোস, সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এবং বর্তমান সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ও সাবেক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার।
নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও শীর্ষে রয়েছেন। এদিকে মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। জোহরান মামদানী এ অবস্থান নিয়ে চমক দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির ভোটারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে এবারের নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেন তিনি। অপরদিকে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রাইমারিতে ডেমাক্র্যাট প্রার্থী না হয়ে স্বাধীন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে ভিন্নতা এসেছে। জনপ্রিয়তার অনেকটা তলানীতে থাকায় নিজের আগের অবস্থান ফিরে পেতে নানা কৌশল ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এরিক অ্যাডামস।
গত ১৮ মে রোববার এক প্রতিবেদনে পলিটিকো জানায়, দুর্নীতি ও কোভিডকালে নার্সিং হোম সংকটসহ নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক জরিপে কুওমো এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও কুওমোর প্রচারণা দল প্রচুর তহবিল সংগ্রহ করেছে, যা তাকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে আগামী ২৪ জুনের প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন কৌশল বদলে তার জনপ্রিয়তা ভাঙতে চেষ্টা করছেন।
এদিকে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস পুনর্নির্বাচনের লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহে গতি বাড়িয়েছেন। গত মার্চ থেকে চলতি মে মাসের মধ্যে তিনি ১ লাখ ৫৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছেন। যার ফলে তার মোট প্রচার তহবিল দাঁড়িয়েছে ৪.৫ মিলিয়ন ডলারে। গত ১৭ মে শনিবার এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক পোষ্ট জানায়, দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলায় মেয়র এরিক এখনো পাবলিক ফান্ডের ৪ মিলিয়ন ডলার পাননি। অপরদিকে, ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে অংশ না নিয়ে তিনি দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে নাম উঠাতে তাকে এখন ৩,৭৫০টি স্বাক্ষর জমা দিতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এখনো পর্যন্ত বড় কোনো আনুষ্ঠানিক সমর্থন পাননি। বরং শহরের অপরাধ পরিস্থিতি ও আবাসন সমস্যা নিয়ে সমালোচনার মুখে তিনি পড়েছেন। যদিও তিনি পুলিশের সাথে তার সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের অঙ্গীকার তুলে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবুও তার পুনর্র্নিবাচন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
অপরদিকে নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবার মেয়র নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে বিশাল সমর্থন সংগ্রহ করেছেন। ৩২ বিজে এসইআইইউ (হোটেল ও পরিষেবা শ্রমিক ইউনিয়ন) এবং ১১৯৯ এসইআইইউ (স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বৃহত্তম ইউনিয়ন) সহ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমর্থন তার ঝুলিতে এসেছে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান কিছু নির্বাচিত কর্মকর্তারাও তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউইয়র্ক সিটির ভোটব্যাংকে শ্রমিক ইউনিয়েনের বিশাল প্রভাব থাকায় এটি কুমোর জন্য বড় সুবিধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে জোহরান মামদানি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও রেনোসো, রাজ্য সিনেটর জাবারি ব্রিসপোর্ট, ক্রিস্টেন গঞ্জালেজ ও জুলিয়া সালাজার তার প্রার্থিতাকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া, সিটি কাউন্সিল সদস্য জেনিফার গুটিয়েরেজ এবং স্যান্ডি নার্সও তাকে সমর্থন করেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে জেলা পরিষদ ৩৭, ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স রিজিওন ৯এ এবং পেশাদার স্টাফ কংগ্রেস মামদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। প্রগতিশীল সংগঠনগুলির মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা, নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির সমর্থনে এসেছে তার।
মামদানির সমর্থকরা বলছেন. নিউইয়র্কের খেটে খাওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার নির্বাচনী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে বাসে চলাচল ফ্রি করা, রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড ইউনিটের রেন্ট ফ্রিজ করা এবং চাইল্ড কেয়ার ফ্রি করা অন্যতম।
এছাড়াও বর্তমান সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামসও শক্ত সমর্থন পেয়েছেন। নিউইয়র্ক রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস তার প্রার্থিতাকে সমর্থন দিয়েছেন। যা তাকে আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায় এবং প্রগতিশীল ডেমোক্রেটদের মধ্যে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে এনেছে। এছাড়া নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি এবং বেশ কয়েকটি স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনও অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
অপরদিকে নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটর জেলনর মাইরি এবং জেসিকা রামোস নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল ভোটারদের মন জয় করছেন। তারা স্থানীয় পর্যাযয়ে গ্রাসরুটস সংগঠন এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্য থেকে ছোট কিন্তু কার্যকরী সমর্থন পাচ্ছেন। বিশেষ করে হাউজিং, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপরাধ দমনের মতো ইস্যুতে তাদের স্পষ্ট অবস্থান তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা তৈরি করছে।
সাবেক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার এবং বর্তমান কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং প্রথাগত দলীয় সংগঠনগুলোর সমর্থন আদায়ে মনোযোগী। স্ট্রিংগার ইতিমধ্যে কিছু ঐতিহ্যবাহী ম্যানহাটন ডেমোক্রেটিক ক্লাবের সমর্থন পেয়েছেন। যেখানে ল্যান্ডার ব্রুকলীন এবং কুইন্সে তার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমর্থনের এই প্রাথমিক চিত্র কেবলই নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। সমর্থনের এই চিত্র নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন। বিশ্লেষকরা চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি সংযোগ, ইস্যু ভিত্তিক প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের দক্ষতার ওপর। বিশেষ করে মাইগ্র্যান্ট, শ্রমজীবী এবং তরুণ ভোটারদের ভূমিকা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।