যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সোমবার (৯ জুন) থেকে কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নেওয়া এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক এবং উদ্বেগ। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া দেশগুলো হলো: আফগানিস্তান, চাদ, ইরিত্রিয়া, মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে 'সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ঠেকাতেই' এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। এ দেশগুলো হলো: বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। এসব দেশের নাগরিকদের জন্য কেবল সাময়িক কাজের ভিসার সীমিত সুযোগ রাখা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ কর্মসূচি রোববার আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “নতুন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।”
এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময়ও মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশগুলোর অনেকগুলিতেই চলমান যুদ্ধ, মানবিক সংকট এবং ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই অভিবাসন ইস্যুতে আবারও কড়াকড়ি আরোপ করে নিজের সমর্থক ঘাঁটিকে শক্তিশালী করতে চাইছেন ট্রাম্প। তবে এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক অবস্থান ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও অনেকে মনে করছেন।