মার্কিন নির্বাচন

ফুটফুটে কমলা হ্যারিস, চিন্তিত ট্রাম্পশিবির

নতুনধারা
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৮

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে উত্তেজনার ব্যারোমিটারে পারদের উচ্চতা ততই বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে নির্বাচনী দৌড়ে আসা কমলা হ্যারিসের আলোকচ্ছটায় কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সর্বশেষ ডিসিশন ডেস্ক হেডকোয়ার্টার এবং দ্য হিল যে পূর্বাভাস জানিয়েছে তাতে করে ট্রাম্প শিবিরের আলোটা একটু হলেও উজ্জ্বল হতে পারে।
ডিসিশন ডেস্ক হেডকোয়ার্টার এবং দ্য হিল জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে কেনেডি ও নিক্সনের লড়াই যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছিল কমলা ও ট্রাম্পের লড়াইটা তেমন হতে পারে। ৬৪ বছর আগে ১৯৬০ সালের নির্বাচনে কেনেডি স্বল্প ব্যবধানে নিক্সনকে হারিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনও তেমনি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। নির্বাচনের ভবিষ্যদ্বাণীর ‘নস্ট্রাডামুস’ নামে পরিচিত ঐতিহাসিক অ্যালান লিচমানের পূর্বাভাস প্রকাশ করার পর নতুন এই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। 
জুলাইয়ের শেষ দিকে জনমত জরিপে ট্রাম্প মাত্র ১ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রকাশিত জরিপে ব্যবধানটা অনেক বেড়ে গেছে। কমলার জনসমর্থন ৪৫ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪১ শতাংশ। কমলার নারী সমর্থনও বেড়েছে। জুলাই মাসে নারী সমর্থন কমলার দিকে ৯ পয়েন্ট বেশি ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ পয়েন্টে। কমলার প্রতি নারী সমর্থন ৪৯ ভাগ, ট্রাম্পের পক্ষে ৩৬ ভাগ। নারী ভোটারের সমর্থন ব্যাপকভাবে কমে আসায় ট্রাম্প শিবির দুশ্চিন্তায় পড়েছে। নারী সমর্থন এখন ট্রাম্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লড়াই থেকে ট্রাম্প খুব যে ছিটকে পড়েছেন তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পেনসিলভানিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়া রাজ্যে জিততে পারলেও তিনিও ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন।
জনতম জরিপে যেমন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন তেমনি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে ট্রাম্পকে আরও বেশি পেছনে ঠেলে দিয়েছেন হ্যারিস। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হারিসের প্রচারণা টিম গত মাসে অর্থ সংগ্রহে রেকর্ড গড়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে তার প্রচারণা টিম গত মাসে ৩৬১ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। জুলাই মাসের শেষ সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেনের বিদায়ে নির্বাচনের টিকিট পাওয়ার পর এ পর্যন্ত কমলা ৬১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচনের দুই মাস আগে কমলা হ্যারিস ও রানিং মেটের হাতে এ মুহূর্তে ৪০৪ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। হ্যারিসের বেশিরভাগ অর্থ এসেছে শিক্ষক ও নার্সদের কাছ থেকে। গত মাসে আসা অর্থের শতকরা ৬০ ভাগ এসেছে নারীদের কাছ থেকে।
বাইডেন থাকা অবস্থায় ট্রাম্পের পালে হাওয়া লাগলেও এখন তা পরিষ্কারভাবে দিক বদল করেছে। জনমত জরিপের পাশাপাশি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে ট্রাম্প পিছিয়ে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আইন-আদালত। ট্রাম্পকে মোটেও স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না আদালত। স্টর্মি ড্যানিয়েলস মামলা ট্রাম্পকে বড় সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিউইয়র্কের বিচারক জুয়ান মার্চান এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা স্থগিত হবে কি না, সে ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করার কথা। ট্রাম্পের আইনজীবীরা অবশ্য রায় স্থগিত রাখতে চান। মামলার রায়ে ট্রাম্পের চার বছরের শাস্তি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ট্রাম্পকে হয়তো এ শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
শুক্রবার ট্রাম্পের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা। একই সময়ে তার অন্য একটা মামলায় কোর্টে যাওয়ার কথা। ফলে আদালতের পেছনে ট্রাম্পকে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্ররা নির্বাচনে ভোট কারচুপির কথা বলছেন। এসব বলে তারা আসলে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়াচ্ছেন। ট্রাম্প হেরে গেলে নির্বাচনে প্রতারণা হয়েছেÑ এমন দাবি করার মাঠ প্রস্তুত করাই তাদের লক্ষ্য বলে সতর্ক করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
এই কৌশলের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। অ্যারিজোনার মেসা নগরের রিপাবলিকান মেয়র জন গিলেস বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার মিত্ররা ‘সবকিছুই করে দেখবেন, কীসে সফলতা আসে’। তিনি আরও বলেন, ‘যদি হেরে যান তবে তারা দাবি করবেন, সবকিছুই ভুল ছিল। যদি হেরে যাওয়ার পরও ট্রাম্প কোনো ধরনের বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা না করেন, তবে আমি খুবই অবাক হব।’
নিজে রিপাবলিকান হলেও গত মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন মেয়র গিলেস। ট্রাম্প ও তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা) মিত্ররা একই সুরে ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটিং মেশিন এবং ড্রপ বক্সের ভোট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন।
নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাম্প ২০২০ সালে ভোটের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই অভিযোগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পরে ট্রাম্প তাদেরও আক্রমণ করেন। এখন ট্রাম্পের মিত্ররা সেটাও প্রচার করছেন এবং দাবি করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন অনেকে সেবার ভোট দিয়েছেন এবং তাদের সংখ্যা অনেক ছিল। যদিও এ দাবির পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।