বাতিল হল নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও 

সংক্ষিপ্ত হলো ড. ইউনূসের জাতিসংঘ সফর

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এমনকী বাতিল করা হয়েছে নিউইয়র্কে তার নাগরিক সংবর্ধনা। 
এর আগে ঢাকা থেকে জানানো হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ৫ দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কে আসবেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দেশে ফিরে যাবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এই তারিখ পরিবর্তন এবং সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এর স্বপক্ষে কোনো কারণ কেউ জানাতে পারেনি। 
ঢাকার একটি সূত্র জানায়, পরিবর্তিত সফরসূচি অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে জাতিসংঘে ১৭ বার বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলায় ভাষণ দেবেন কীনা জানা যায়নি। 
এদিকে নাগরিক সংবর্ধনা আপাতত বাতিল হলেও প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করবেন কীনা তা এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সেলর ও মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফাহমিদ ফারহান জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি এখনো মিশনকে জানানো হয়নি। অতএব, এই মুহূর্তে তারা কিছু বলতে পারছেন না। 
তিন দিনে কোন কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য জানাতে পারেননি ফাহমিদ ফারহান। 
এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা কেন বাতিল হয়েছে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য জানাতে পারেনি সরকারি সূত্রগুলো। তবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের একটি অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে- সফর সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা বাতিল করা হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার কয়েকজন সফরসঙ্গী বা অগ্রবর্তী দলটি ২২ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। 
এদিকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন, দূতাবাস ও কনস্যুলেট ছাড়াও প্রবাসী আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ও প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেটের পক্ষ থেকেই ম্যানহাটনের অভিজাত ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে ৬০০ লোকের আসন বিশিষ্ট একটি বলরুম বুকিং দেওয়া হয়েছিলো। 
ঢাকার একটি সূত্র জানায়, ড. ইউনূসের অনাগ্রহের কারণেই নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক আগমনের তারিখও পিছিয়ে গেছে। আগে বলা হয়েছিলো ২২ সেপ্টেম্বর রোববার তিনি নিউইয়র্ক আসবেন। নতুন শিডিউল মোতাবেক তার নিউইয়র্ক আগমনের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার।
ঢাকার দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে ঢাকায় বিতর্কিত নানা বার্তা যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সংবর্ধনার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে ঢাকা থেকে বলা হচ্ছে- সময় স্বল্পতার কারণে সংবর্ধনা বাতিল করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার দেশের মৌলিক সংস্কার কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত। এরই মধ্যে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান দেশের জন্য বড় একটি বিষয়। 
অন্যদিকে কনস্যুলেট আর মিশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানেচ্ছু প্রবাসীদের নামের বহরে একদিকে কনস্যুলেট যেমন বিব্রত তেমনি কোন মতের বা পথের, বা কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক তা নিয়েও কনস্যুলেট বিব্রত। ড. ইউনূসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য হাজারের বেশী প্রবাসীর নামের  তালিকা বিভিন্ন মাধ্যমে কনস্যুলেটে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে একজনের নাম একাধিকবার রয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ‘নিউইয়র্কে ড. ইউনূস অবাঞ্ছিত আর প্রতিবাদ সমাবেশ’ কর্মসূচী বিব্রতকর কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বতিল হওয়ায় হোটেল বুকিংয়ের জন্য মোটা অংকের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে সরকারকে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হোটেল বুকিংয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। সংবর্ধনা বাতিল হওয়ায় সমুদয় অর্থ ফেরত পাবার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে কিছুটা হলেও ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আগামী ২৪-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক সফর করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে তার সঙ্গে থাকবেন ৭-১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। 
সূত্র জানায়, প্রতিনিধিদলে থাকছেন ড. ইউনূসের মেয়ে দিনা আফরোজ ইউনূস, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি। এছাড়া প্রেস উইংয়ের এক থেকে দুইজন সদস্য সফরসঙ্গী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।