যুক্তরাজ্যের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী 

বাংলাদেশে সব দলের সমান অংশগ্রহণ আশা করে যুক্তরাজ্য

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:২৬

ঢাকা সফররত যুক্তরাজ্যের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব দলের সমান অংশগ্রহণ আশা করে যুক্তরাজ্য। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান তিনি। ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটা রূপরেখা ঘোষণা করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।  
দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাথরিন বলেন, ‘অবশ্যই। আশরা আশা করি, প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে কথা হয়নি। তবে সরকার চাইলে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। 
ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ যাত্রায় প্রফেসর ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাজ্য। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কী ধরনের সহায়তা চায় সেই অনুযায়ী পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করার চেষ্টা করবে যুক্তরাজ্য।
সরকারের কাজের রূপরেখা প্রত্যাশা: রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জন্যও সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যাগ যুক্তরাজ্য চায় কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই এবং আমরা চাই, সবকিছু কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেটার রূপরেখা অধ্যাপক ইউনূস সরকার দেবে এবং পরবর্তী ধাপে যাওয়ার যাত্রায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করতে চাইবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব কাজ করছে, সবক্ষেত্রে আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই।
ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি আইনশৃঙ্খলা পুনরূদ্ধার, জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং জাতীয় আপসরফার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এসব উদ্দেশ্য সাধনে যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা জানি, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের সঙ্গে জনগণের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। 
ক্যাথেরিন ওয়েস্ট বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের খুবই জোরালো ও অবিচল সম্পর্ক রয়েছে, সে জায়গা থেকে আমরা ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে চাই।
তিনি বলেন, ১১ বছর পর আমি বাংলাদেশে এসেছি। সেই হিসেবে এটা বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সফর। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা জানি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় এবং জাতীয় পুনর্মিলনকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এ বিষয়ে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। 

রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জন্যও সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যাগ যুক্তরাজ্য চায় কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই এবং আমরা চাই, সবকিছু কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেটার রূপরেখা অধ্যাপক ইউনূস সরকার দেবে এবং পরবর্তী ধাপে যাওয়ার যাত্রায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা করতে চাইবে। 


পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ক্যাথরিন ওয়েস্ট শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাজ্য সরকারের কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধির এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুভেচ্ছা সফর হলেও ক্যাথরিন ওয়েস্টের ঢাকায় অবস্থানের সময় আলোচ্যসূচিতে ভারত মহাসাগরীয় কৌশল গুরুত্ব পাবে। সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ, রাজনীতি, অর্থনীতি, মৌলিক মানবাধিকারসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মৌলিক বিষয়বস্তু এবং সমসাময়িক বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোও আলোচনায় আসার কথা রয়েছে।
খসড়া সূচি অনুযায়ী, দুই দিনের সফরের সময় ক্যাথরিন ওয়েস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করতে পারেন। গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ক্যাথরিন ওয়েস্ট। 
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাথরিন ওয়েস্ট যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে সরাসরি চীন, উত্তর-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর দেখভাল করেন। তা ছাড়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বিশেষত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, প্রযুক্তির বিস্তৃতি ও প্রয়োগের বিষয়গুলো তদারক করে থাকেন।