১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতের স্মরণে গতকাল শনিবার দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ-সেমিনারসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে বিশ^ব্যাপী স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। উপস্থিত সুধীজনের কণ্ঠেও উঠে এসেছে একই আহ্বান। একাত্তরের ২৫ মার্চের সেই রাতে অসংখ্য নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল দেওয়া এক বাণীতে তিনি বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসহ সংশ্লিষ্টদেরও আহ্বান জানান এ বিষয়ে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখার। একই দিন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এ দিন থেকেই হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। আমরা ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি চাই। তাই আমি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
গতকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কালরাত স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুবলীগ। এতে বক্তারা ও উপস্থিত সুধীজন একই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি গণহত্যা দিবসকে সংসদে পাস করানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে এ স্মরণানুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রাকিবুল হাসান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।
বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ অনুষ্ঠানেও নেতারা গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি তুলে ধরেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। তবে বিষয়টি সহজ নয়, কারণ অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র ওই সময়ে পাকিস্তানকে সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বারজার্স। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এত সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক লোককে হত্যা করার নজির নেই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেনোসাইডের সেই নৃশংসতার নজির সৃষ্টি করেছে। হত্যা, ধর্ষণ, লুঠতরাজ, উৎখাত, উৎপীড়নসহ একটি জাতিকে বিপন্ন করার সব চেষ্টাই তারা করেছে। স্বাধীনতার পর ৫২ বছর অতিক্রান্ত হলেও এই নৃশংসতার ঘটনাকে জেনোসাইড হিসেবে জাতিসংঘ আজও স্বীকৃতি দেয়নি। তিনি বলেন, জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না পেলেও আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় গণহত্যা, সেটি কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ২১ বছর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ারা যে গণহত্যাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল সেটিকে আবার সমগ্র বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে এত বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, পৃথিবী যেন স্বীকৃতি দেয়; জাতিসংঘ যেন স্বীকৃতি দেয়। সে জন্য সবাইকে আরও সোচ্চার হতে হবে। এ ছাড়াও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের আয়োজনে গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি তোলেন।