গত ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন পার করলেন ঢাকাবাসী। তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এদিকে ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থানে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর আগে ২০১৪ সালে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়।
১৯৭৫ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই রেকর্ড এখনো ভাঙেনি।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামী দু'দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের শেষের দিকে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
দেশজুড়ে টানা অসহ্য গরমে-ঘামে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পেটের পীড়া, জ্বর-সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, গলাব্যাথা, শ^াসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে প্রত্যেক ঘরে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে দিন-রাত রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। তীব্র গরমের সাথে রাস্তাঘাট, সড়কে বায়ুদূষণ ও ধোঁয়াদূষণ বেড়ে গিয়ে মানুষের চলাচলে, রোগ-দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাপদাহের কষ্টের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিভ্রাট এবং পানির সঙ্কট। বেড়েছে রোজাদারদের কষ্ট-দুর্ভোগ।
সমগ্র দেশে বিরাজমান বৈরী আবহাওয়ায় তীর্যক রোদের দহনে পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, জীববৈচিত্র্য-প্রকৃতিরাজ্য। আম, লিচুর গুটি, কাঁঠালের মোছাসহ মৌসুমী ফলমূলের গুটি তীব্র রোদে শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। নদী, খাল, পুকুর-দীঘিসহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। মাঠের ফসল, বাগান মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
পানির অভাব পূরণের জন্য কৃষক কৃত্রিম সেচের খরচ মেটাতে পারছে না। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বা স্টক ক্রমাগত নিচের দিকে নেমে যাওয়ার ফলে সেচের পানিও মিলছে না। সর্বত্র দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। অবিরাম তাপদাহের কারণে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাচালক, কুলি, দিনমজুর, হতদরিদ্র, নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেড়েছে। আয়-রোজগার কমে গেছে।