সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১০ জন। এর মধ্যে চমক দেখিয়ে দলীয় মনোনয়ন পান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এর পর থেকে সিলেটের কৌতূহলী মানুষের চোখ ছিল মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের দিকে। বঞ্চিতরা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন, নাকি বিদ্রোহের আভাস দিচ্ছেন- সেদিকেই কড়া নজর ছিল নগরবাসীর। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে অটল থেকে সিলেট মহানগরের রাজনীতিতে নবাগত আনোয়ারুজ্জামানকে শুভকামনা জানিয়ে নৌকা প্রতীকের জয়ের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার পর গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবর জিয়ারত করেছেন। অন্যদিকে গতকাল ব্যাপক শোডাউন করে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কয়েক শ গাড়ি ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে তাকে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে নগরীর কুমারপাড়ার বাসায় নিয়ে আসেন নেতা-কর্মীরা। তবে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করেননি আরিফ।
শনিবার আনোয়ারুজ্জামানকে সিসিকের নৌকার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর সিলেটজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য শুরু হয়। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগরীতে আনন্দ মিছিল করেন। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা ছিলেন নীরব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন এমন গুঞ্জনও ছিল নগরজুড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব গুঞ্জন বাতাসে উড়িয়ে বঞ্চিতরা অভিনন্দন জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামানকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা শুভকামনা জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামানকে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ফেসবুকে লেখেন, ‘অভিনন্দন ও শুভকামনা সিলেটের নৌকার মাঝি প্রিয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ...আমি এবং আমার পরিবার সব সময় আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্তের প্রতি অতীতেও অনুগত ছিলাম, আজও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব ইনশা আল্লাহ। কখনোই কী পেলাম না পেলাম তার চিন্তা করিনি।...’
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের অভিনন্দন। নৌকার জয় হোক।’
এদিকে গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আনোয়ারুজ্জামান। এ সময় সিটি নির্বাচনে তার ওপর আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পরে তিনি বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। আজ বেলা আড়াইটায় তার সিলেট ফেরার কথা। এদিকে গতকাল বেলা ২টায় যুক্তরাজ্য সফর শেষে সিলেট পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অন্যবার বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় আরিফুল হক চৌধুরী অনেকটা নীরবেই ফিরতেন। কিন্তু এবার কয়েক শ মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে শোডাউন করে বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। বিমানবন্দরে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে কৌশলী ছিলেন আরিফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার। আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাকে একটা সিগন্যাল দিয়েছেন। সেই সিগন্যাল কী সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবেন।’ সিগন্যাল কি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে- এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, ‘সিলেটের পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ, দলের নেতা-কর্মী সবাইকে নিয়ে বসব। তাদের মতামত শুনব। দলের সিদ্ধান্তের কথাও মাথায় আছে। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।’