বায়তুল মোকাররমে সোনার দোকান উত্তরায় পুড়ল মোটর পার্টস মার্কেট

থামছেই না আগুন

সিলেট ও রংপুরেও আগুনের থাবা
নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫২

রাজধানীতে অগ্নিকান্ড যেন থামতেই চাইছে না। বঙ্গবাজারের পর নিউ সুপার মার্কেট, তারপর আগুন লেগেছে উত্তরার বিজিবি মার্কেটে এবং বায়তুল মোকাররমের সোনার মার্কেটে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে একের পর এক এ অগ্নিকান্ড রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রাজধানীতে পৃথক দুই অগ্নিকান্ড ঘটে। বিকাল পৌনে ৩টায় বায়তুল মোকাররমের সোনার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বিদ্যুতের লাইনে আগুন লাগে। এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে উত্তরায় বিজিবি মার্কেটে মোটর পার্টসের দোকানে আগুন লাগে। তবে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিদুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এ ছাড়া ওই মার্কেটের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নিউমার্কেট থানায় রবিবার ২৭টি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মিডিয়া শাখার প্রধান শাহজাহান সিকদার বলেন, বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বিদ্যুতের লাইনে আগুন লাগে। দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছানোর আগেই আগুন নিভে যায়। উত্তরার বিজিবি মার্কেটের আগুনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, উত্তরার বিজিবি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করে। এরপর আরও ইউনিট বাড়ানো হয়। প্রাথমিকভাবে এ অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ ঘটনায় সেখানে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে উত্তরা ও টঙ্গী থেকে আসা বাহিনীর ছয়টি ইউনিট কাজ করে। পাশাপাশি স্থানীয় জনতাও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতা করে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এক তলা টিনশেড ওই মার্কেটটি উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। এটি উত্তরার নর্থ টাওয়ার ও সাইদগ্র্যান্ড সেন্টারের মাঝামাঝি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। মোটরসাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেট হিসেবে এটি পরিচিত। এতে দোকান আছে প্রায় ৬৫টি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগে মার্কেটের বিভিন্ন দোকান থেকে কালো ধোঁয়ার কু-লী বের হচ্ছিল। ক্রমেই বড় হচ্ছিল কু-লী। দোকানিরা তাড়াহুড়া করে মালামাল বের করে নিচ্ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস জোন-৩-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। আগুন নেভাতে টঙ্গী ও উত্তরার সব মিলিয়ে ছয়টি ইউনিট কাজ করেছে। মার্কেটে গাড়ির সিট ও কাভারের দোকানদার ইয়াসিন বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ মার্কেটের একটি দোকানে আগুন লাগে। এরপর সেখান থেকে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দোকানে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। ঈদ উপলক্ষে কয়েক লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলাম। এখন আমার সব শেষ। আগুন সব কেড়ে নিয়েছে। এর আগে ৪ এপ্রিল রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি পোশাকের মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। তখন আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতি হয় হাজার কোটি টাকার। পথে বসেন হাজারো ব্যবসায়ী। এর রেশ না কাটতেই ১৫ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেটের পাশে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। সে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেন সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবিও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।


ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি : রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিদুর্ঘটনায় গতকাল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওয়াহিদুল ইসলামকে সভাপতি করে এ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক (পরিকল্পনা কোষ) বাবুল চক্রবর্তী, পলাশী ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার, সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা। আর তদন্ত কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন জোন-১-এর উপসহকারী পরিচালক ফয়সালুর রহমান। তদন্ত কমিটিকে তদন্তকাজের জন্য পাঁচ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া শাখার প্রধান শাহজাহান সিকদার।
নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকান্ডে ২৭ জিডি : রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নিউমার্কেট থানায় ২৭টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। গতকাল নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল গনি সাবু বলেন, রবিবার সন্ধ্যার পর ভুক্তভোগী ও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী থানায় ভিড় করেন। একেকজনের একেক ধরনের অভিযোগ। কারও টাকা পুড়েছে, কারও দোকান, কারও এনআইডিসহ প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস। এখন পর্যন্ত সব মিলে ২৭টি জিডি হয়েছে।
এদিকে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। রংপুর নগরীর কাপড়ের মার্কেট মতিপ্লাজায় গতকাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একই দিন আগুন লেগেছে সিলেটে ফলের আড়তে।
জানা গেছে, গতকাল বিকাল সোয়া ৩টায় রংপুর নগরীর কাপড়ের মার্কেট মতিপ্লাজায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকান্ডে মার্কেটের পেছনের অংশে থাকা একটি ফোমের গোডাউন ও কাগজের কার্টনের একটি গোডাউন ভস্মীভূত হয়েছে। ঈদের আগে মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অর্ধশত ব্যবসায়ী। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এমনটা জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন। অন্য দিকে সিলেটে ফলের আড়তে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মার্কেটের ছাদের ওপর সংরক্ষিত ফলের ক্যারট (প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি) থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট তাৎক্ষণিক এসে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান ফল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকান্ডের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় অগ্নিকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর কদমতলী ফলের আড়তের দ্বিতীয় তলার ছাদে সংরক্ষিত ক্যারট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ছাদে কয়েক হাজার ক্যারট সংরক্ষিত ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন সংরক্ষিত সব ক্যারটে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।