নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন আগামী ২৪ এপ্রিল। ওই দিন বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের রাষ্ট্রাচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি, দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, বিচারক, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দুবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হবেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিল। পরদিন বঙ্গভবনে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গতকাল মঙ্গলবার আমাদের সময়কে জানান, নতুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করবেন। এরপর সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। এ দিন তিনি বিদায় নেবেন বঙ্গভবন থেকে। তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। পরদিন থেকে নতুন রাষ্ট্রপতি উঠবেন বঙ্গভবনে।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই পুরো দুই মেয়াদ রাষ্ট্রপ্রধানের পদে দায়িত্ব পালন করলেন। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি এই পদে থাকতে পারেন না।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কার্যত আইনাঙ্গনের লোক।
১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। ওই বছরের ৯ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেন। কাকতালীয়ভাবে হলেও আইনাঙ্গনের লোক মহামান্য দুজন সাবেক ও নতুন রাষ্ট্রপতির নামই সাহাবুদ্দিন।
১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনার জন্মগ্রহণ করা বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্যে ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি হয়ে যুবলীগ নেতা হিসেবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে বিচার বিভাগে বিচারক হিসেবে চাকরি ও দুদকের কমিশনার হিসেবে চাকরি করেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য হন এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি পান। ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি থেকে ৬ বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
এক সময় পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।