সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ নিয়েছেন নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অফিসের দায়িত্ব পরিবর্তনের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ নিজ আসন বদল করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে সকাল ১০টায় নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং শতাধিক বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের সদস্যরা এবং বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংসদের ডেপুটি স্পিকার, সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রতিমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিমকোর্টের বিচারক, বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন বা ইনস্টিটিউটের প্রধান, জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ এক হাজার ১০০ জনের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
৭৩ বছর বয়সী মোঃ সাহাবুদ্দিন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী, মা খায়রুন্নেসা। রাষ্ট্রপতি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মোঃ সাহাবুদ্দিন পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
মোঃ সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম দৈনিক আমাদের সময়সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে।
কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন পর পর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘গার্ড অব অনার’: দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল মাঠে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়।
বঙ্গভবনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন নতুন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে গতকাল সোমবার গুলশানের বাসভবন ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বঙ্গভবনে ওঠেন মো. সাহাবুদ্দিন। এদিন রাত পৌনে ৯টায় সপরিবার বঙ্গভবনে ওঠেন তিনি।