বিশ্ব হার্ট দিবস আজ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘Use Heart, Know Heart’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। সুস্থ থাকার চেয়ে সুখের কিছু নেই। কিন্তু সেটি আমরা বুঝতে পারি অসুস্থ হবার পরে। অসুখ আমাদেরকে বুঝতে শেখায় সুখের মাধুর্য। তাই বলে আমরা অসুস্থ হবার অপেক্ষায় থাকব না। বরং কখনো যাতে ব্যাধির ব্যাধ আমাদেরকে বিদ্ধ করতে না পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
পরিহার করুন ধূমপান :
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে হৃদরোগীদের অর্ধেকেরও বেশি ধূমপায়ী। অধূমপায়ীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। মাদক কিংবা তামাকে যেসব রাসায়নিক উপাদান থাকে তা ধমনির ক্ষতি করে। এর ফলে সারা দেহে রক্ত পাম্প করতে হৃৎপিণ্ডকে বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁঁকিও বাড়ে বহুগুণে। এ ছাড়াও সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা কার্বন-মনো-অক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটি শুধু হৃদরোগ থেকে মুক্তির কারণই নয়, বরং আরও অনেক রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকতে আপনাকে সাহায্য করবে।
কমিয়ে দিন চর্বিযুক্ত খাবার :
অধিক চর্বিযুক্ত খাবার হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে বড় শত্রুদের একটি। চর্বি, কোলেস্টেরল, লবণ ইত্যাদি হার্টের জন্য খুবই খারাপ। চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির চামড়া, বড় চিংড়ি, কোমলপানীয় ইত্যাদি খাবার যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো।
বাধা নেই ফল-সবজিতে :
যত বেশি পরিমাণ মাছ, শাক-সবজি ও ফল খাওয়া যায় ততই ভালো। এ খাবারগুলো খেতে কোনো মানা নেই এবং যত ইচ্ছা তত খেতে পারেন। মাংসের স্বাদ মাছে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন মৌসুমি ফল খেতে কোনো বাধা নেই। আর বাজারে যেসব শাকসবজি পাওয়া যায় তার সবই কমবেশি খাবেন। এতে করে ভালো থাকবে আপনার হৃৎপিণ্ড, সুস্থ থাকবে দেহ।
অভ্যাস করুন হাঁটার :
নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে ৪০ মিনিট হাঁটতে পারেন। যা আপনার হৃৎপিণ্ডসহ পুরো শরীরকে রাখবে সুস্থ ও রোগমুক্ত। সেই সঙ্গে যদি ব্যায়াম করা যায় তবে তো আরও ভালো। দৈনিক অল্পকিছু সময়ের ব্যায়াম আপনার শরীরকে রাখতে পারে হৃদরোগের ঝুঁঁকিমুক্ত। নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিসের ঝুঁঁকিও কমায়, যেটি হৃদরোগের আরেকটি কারণ। দৈনিক কমপক্ষে ৪০ মিনিটের হালকা ব্যায়ামই অনেক উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন :
শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। কেননা শরীরের অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁঁকি বাড়ায় বহুগুণে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কামাতে পারলে সেটি একদিকে যেমন হৃদরোগের ঝুঁঁকি কমায়, অন্যদিকে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়ারেটিস থেকেও মুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
চাপমুক্ত থাকুন :
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে থাকে নানারকম কাজের চাপ। ব্যবসায়, চাকরিতে এমনকি পারিবারিক জীবনের নানান বিষয়ে এ চাপগুলো আমরা অনুভব করি। কিন্তু হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখতে শরীর ও মনকে প্রশান্ত রাখার চেষ্টা করুন। এসব নিত্য চাপ থেকে মুক্তি পেতে ইয়োগা, মেডিটেশন ইত্যাদিও করে দেখতে পারেন।
যত্ন নিন দাঁতের :
নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন। ভাবছেন, হয়তো হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে আবার দাঁতের যত্ন কেন। নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতে হবে, কারণ দাঁতের রোগ অনেক ক্ষেত্রে হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিশেষ করে বাতজ্বরের সঙ্গে।
এ বিষয়গুলো মেনে চললে অবশ্যই একজন ব্যক্তির পক্ষে তার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই আসছে ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলুন সবাই আমরা আমাদের হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখার চেষ্টা করি, সেই সঙ্গে আমাদের ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে সুস্থ হৃৎপিণ্ড ও নিরোগ দেহে একটা সুন্দর জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি নিই।
লেখক : সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।