দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘চূড়ান্ত ধাপের’ কর্মসূচি দেওয়ার আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘আচরণ’ বুঝতে চায় বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নেতাদের আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় ক্ষমতাসীন দলের কোনও নেতার বক্তব্যেই বার্তা স্পষ্ট হতে পারছে না বিরোধীপক্ষ। সেক্ষেত্রে নেতাদের পরামর্শ, বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের আচরণ ও টোন কী হয়, তার উপর নির্ভর করছে সরকার-পতনের আন্দোলনের গতি।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষনেতাদের প্রায় দেড় ঘণ্টার ‘উষ্ণ বৈঠকে’ নেতারা উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় সরকারের ‘মূল রহস্য’ স্পষ্ট হচ্ছে না। সে কারণে আগামী দিনের আন্দোলন ও কর্মসূচি দেওয়ার আগে প্রতিপক্ষের পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে চাইছেন নেতারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা বৈঠকে এমন পরামর্শ দিলে বিএনপির পক্ষ থেকেও তাতে সায় দেওয়া হয়। বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি উভয় পক্ষের সদস্যসহ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি ও মঞ্চের নেতারা জানান, আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি ও যুগপতের কর্মসূচি রয়েছে। এরপর কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা নিয়ে আবারও আলোচনা হবে। তবে নেতারা অক্টোবরের মধ্যেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত ধাপে নেওয়ার পক্ষে। ৭ অক্টোবরের আগে ছাত্র, যুব ও পেশাজীবী সম্মেলন করা হবে। এরমধ্যে অক্টোবরের ২০-২৪ পূজা থাকায় ওই সময়টিতে ভিন্ন কোনও আয়োজন করার চিন্তা-ভাবনা করছেন নেতারা।
বৈঠকসূত্র জানায়, এরইমধ্যে কয়েকজন নেতা বক্তব্যে নানা উত্তেজক কথা বললেও আদতে ওইরকম কোনও অবস্থা নেই বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর। নেতারা মনে করছেন, চলমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখার মধ্য দিয়েই জনমানুষ অংশ নিচ্ছে। আরও কীভাবে বেশি সংখ্যক মানুষ যুক্ত করা যায়, সে দিকটিও চিন্তা করতে নেতারা পরস্পরের উদ্দেশে তাগিদ দেন।
এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ অত্যন্ত খোলামেলা ও আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে জাগরণ দেখা যাচ্ছে। কীভাবে কর্মসূচি আরও জোরদার করা যায়, সে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।’
নেতারা জানান, আগামী অক্টোবর ও তফসিলের আগে-পরের সময়টিতেই আন্দোলনকে চূড়ায় নিতে চায় বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। এ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, ‘কবে নাগাদ অলআউট আন্দোলনে যাবো, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি এখনও ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের আলোচনা চলছে।’
জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চূড়ান্ত কর্মসূচি বলে তো কিছু নাই। আমরা আন্দোলনে আছি। সরকার কী স্টেপস নেয়, নির্বাচন কমিশনের বিষয়ও আছে। এগুলো দেখে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’